গুম, নির্যাতনের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকীয়
বস্তুত বিরোধী মত দমনে হেন কাজ নেই, যা করেনি বিগত সরকার। এমনকি সরকারের মদদে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য কর্তৃক বলপূর্বক গুম, নির্যাতনসহ নানা অপরাধের ঘটনা ঘটেছে।
এসব অপরাধের নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গুম কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ আমলে সংঘটিত বেশির ভাগ গুমের খবর জানতেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে থাকা ভুক্তভোগীদের নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যও জানানো হতো তাকে।
এসব গোয়েন্দা সংস্থায় দায়িত্বরত বিভিন্ন কর্মকর্তার মনোভাব, আইনবহির্ভূত সরকারি সিদ্ধান্ত মানতে তাদের অনীহার বিষয়-সবকিছুই তাকে জানানো হতো।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুম কমিশনের দাখিল করা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গুমের ঘটনায় ভারতের সঙ্গে গোপনে বন্দি বিনিময় কার্যক্রম ছিল।
দুই দেশের গোয়েন্দারা ভুক্তভোগীদের আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করতেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক সদস্য ৫ আগস্টের পর গণভবনে পরিত্যক্ত কিছু নথিপত্র পর্যালোচনা করে হাতে লেখা দুটি চিঠি পান।
র্যাবের দুই কর্মকর্তা বেআইনি আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাহিনীর পরিচালক বরাবর সেগুলো লিখেছিলেন। ওই চিঠিগুলো শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়ে দেন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেসব চিঠি নিজের ফাইলে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। চিঠিগুলোর একটিতে লেখা ছিল-আমাকে কোনো অপারেশনে পাঠানো হলে সেখানে বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যা করা কিংবা দেশের আইনবিরোধী গুলির নির্দেশনা দেয়া থাকলে আমি সে কাজ করতে পারব না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী বয়ান ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয়েছে।
এ সম্পর্ক যৌথ অভিযানে, আন্তঃসীমান্ত সমন্বয়ে এবং আইনবহির্ভূত কার্যক্রমেও রূপ নেয়। একাধিক ভুক্তভোগী কমিশনকে বলেছেন, কীভাবে তাদের ভারতের হেফাজত থেকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কিংবা বাংলাদেশের হেফাজত থেকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতরে যেসব সদস্য গুম, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা কিংবা প্রতিষ্ঠানগত জবাবদিহির মতো বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বা ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন, তাদের প্রায় সবাইকেই নানাভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।
গুম, নির্যাতনসহ এ সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে বা যারা জড়িত, তাদের সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।