গাজায় খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে ৪১০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত: জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক: গাজা উপত্যকার বিতর্কিত নতুন সহায়তা কেন্দ্রগুলো থেকে ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৪১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে — যা যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের এই সতর্কবার্তা আসে এমন এক সময়ে, যখন ২৭ মে থেকে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গাজায় বিকল্প সহায়তা বিতরণ কেন্দ্র চালু করেছে। এই কেন্দ্রগুলো জাতিসংঘ ও প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য মানবিক সংস্থাকে বাইপাস করে পরিচালিত হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র থামিন আল-কেতান বলেন, ‘এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে বিশৃঙ্খলা, হতাহতের ঘটনা এবং গুলিবর্ষণ প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছে, কারণ দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজাবাসী খাদ্য পাওয়ার জন্য সেখানে ভিড় করছেন।’
তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের সামরিকীকৃত মানবিক সহায়তা কাঠামো আন্তর্জাতিক সহায়তা বিতরণের মানদণ্ডের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
বেসামরিক জনগণের খাদ্য ও জরুরি সহায়তার মতো মৌলিক অধিকারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা এবং তাদের জীবনরক্ষাকারী সেবায় প্রবেশে বাধা দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত।’
গাজার জরুরি পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় সংস্থা জানায়, ‘সেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সের বহু মানুষ নিহত ও আহত হচ্ছেন। বৃহৎ পরিসরের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।’
জেনেভা থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র আরও জানান, এই বেসরকারি সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে নিহতদের কেউ কেউ ইসরাইলি গোলাবর্ষণে নিহত হয়েছেন, কেউ আবার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
তিনি বলেন, এই কেন্দ্রগুলো বেসামরিক নাগরিকদের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে এবং গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট আরও গভীর করেছে।
এছাড়া জাতিসংঘের তথ্যমতে, জাতিসংঘ ও অন্যান্য সহায়তা সংস্থার হাতে থাকা সীমিতসংখ্যক সহায়তা বহরে পৌঁছাতে গিয়েও ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে আরও অন্তত ৯৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, একটি আগের বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছিল, ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ফিলিস্তিনি কর্মীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে—যা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে হামাস-ঘনিষ্ঠ সশস্ত্র ব্যক্তিরা।
এই বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, ‘এই ধরনের হত্যাকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং যারা এসব অপরাধ ঘটিয়েছে, তাদের দায়বদ্ধতার আওতায় আনতে হবে।’
এই অবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মহলে চরম উদ্বেগজনক বলে বিবেচনা করা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন গাজায় সহায়তা পৌঁছানো প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে এবং ক্ষুধার্ত মানুষদের নিজেদের জীবন বাজি রেখে খাদ্য সংগ্রহে যেতে হচ্ছে।