রাজশাহীসহ ১৩ জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযান সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় পরিচয়পত্র সেবায় অনিয়ম, তথ্য সংশোধনে দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগে একযোগে রাজশাহীসহ দেশের ১৩ জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল সোমবার সকালে একযোগে দুদকের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়। একযোগে চলা দুদকের অভিযানে সেবাগ্রহীতাদের সরকারি ফি নগদে নেয়ার অভিযোগের সতত্যা পেয়েছে দুদক কর্মকর্তারা।
দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলা নির্বাচন অফিসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত, সংশোধন ও বিতরণে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চলছে।
এসব অভিযানে সংশ্লিষ্ট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার নির্বাচন অফিসে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন ভবনে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। গতকাল সোমবার দুপুরে দুদক কর্মকর্তারা এ ভবনের বোয়ালিয়া থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়, জেলা নির্বাচন অফিস ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে বেশ কিছু তথ্য নেন।
এছাড়া অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলেন দুদকের কর্মকর্তারা। দুদকের তিন সদস্যের এই এনফোর্সমেন্ট টিমের নেতৃত্বে ছিলেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন। দুদক কমিশনে যাওয়া এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান বলে জানান তিনি। আমির হোসাইন জানান, ২২ জুন দুদক কমিশনে অভিযোগ করেন একজন ভুক্তভোগী।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করে এ অভিযান চালানো হয়। দুদকে করা অভিযোগে বলা হয়, নির্বাচন অফিসে বিভিন্ন সেবা নিতে এলে দিনের পর দিন হয়রানি হতে হয়। সরকারি নির্ধারিত ফি দিয়ে দ্রুত কাজ হয় না। বাড়তি টাকা দিলে দ্রুত কাজ হয়ে যায়। দুদক কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে আবেদন গ্রহণ ও নিষ্পত্তির তথ্যাদি সংগ্রহ করেন।
নগরীর বোয়ালিয়া থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের অফিসে সেবা নিতে কোনো হয়রানি হতে হয় না। টাকাও নেয়া হয় না। কিন্তু পাসপোর্ট করার সময় অহেতুকভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের জন্য এখানে পাঠানো হয়। তখন ট্রেজারির বাইরে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা কর্মীরা দু-এক শ টাকা নেয়। পাসপোর্ট অফিস নিজেই জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করতে পারে। এটা কেন যে আমাদের কাছে পাঠায়, সেটা বুঝি না।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তারা যখন এসেছিলেন, তখন আমি একটু মিটিংয়ে ছিলাম। এ বিষয়ে বিস্তারিত আমি জানাতে পারব না।’ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযানে গিয়েছিলাম। আমরা এ ব্যাপারে দুদক কমিশনে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেব।’
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন, সংগ্রহ, ঠিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগে ছদ্মবেশে নওগাঁ জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুপুরে দুদকের একটি দল এই অভিযান চালায়। অভিযানের সময় নগদ অর্থ লেনদেনের প্রমাণ মেলে বলে জানানো হয়েছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় নওগাঁর উপ-সহকারী পরিচালক মেহবুবা খাতুন রিতা। তিনি বলেন, সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পর প্রথমে ছদ্মবেশে অফিসে প্রবেশ করা হয়। তখন প্রত্যেক সেবাপ্রত্যাশীর কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হচ্ছিল।
তিনি আরও জানান, এই অফিসে সরাসরি নগদ টাকা লেনদেনের সুযোগ নেই। কিন্তু দেখা গেছে, প্রত্যেক সেবাপ্রত্যাশীর কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ হিসেবে ১০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ডেকে সরেজমিনে এসব অনিয়ম দেখানো হয়। এরপর কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে দাখিল করা হবে।
তবে নগদ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল মোত্তালিব জানান, নির্বাচন অফিসে সরাসরি নগদ লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। এনআইডি সংশোধনের নির্ধারিত ফি অনলাইন ব্যাংকিং বা চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হয়।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, অনলাইনে সেবা গ্রহণে বিড়ম্বনার অভিযোগে পাবনার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদক সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের একটি দল। দুপুরে দুদক সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধরের নেতৃত্বে দুদকের একটি দল জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযান চালায়। একজন সেবাগ্রহীতার অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অনলাইনে নাম, বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে কিছু হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়।
দুদক সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর জানান, অভিযানে বিভিন্ন সেবাগ্রহীতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অধিকাংশ সেবাগ্রহীতা সন্তোষজনক সেবা পেয়েছে বলে জানান। তবে কয়েকজন সেবাগ্রহীতা সঠিকভাবে সেবা পায়নি বলে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।