ঢাকা | জুন ২৫, ২০২৫ - ৩:২১ পূর্বাহ্ন

তানোরে বৃদ্ধি পাচ্ছে পার্থেনিয়াম গাছ, হতে পারে মৃত্যুর কারণ

  • আপডেট: Tuesday, June 24, 2025 - 10:37 pm

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে রাস্তার ধারে ও বাড়ির আশেপাশে দেখা যাচ্ছে পার্থেনিয়াম গাছ, যা হতে পারে মৃত্যুর কারণ। তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়ছে মরণাত্মক এই পার্থেনিয়াম গাছের।

তবে, বাড়ির পাশে ও রাস্তার ধারে জন্মানো এই গাছের ক্ষতিকর বিষয়ে জানেন না গ্রামের মানুষ। ফলে, এই গাছ নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্য নেই তেমন কোন সচেতনতা ও  গুরুত্ব।

তানোর উপজেলা বিভিন্ন এলাকার মানুষকে এই গাছ দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা এটা কি গাছ চেনেন না বলেও জানান তারা। তবে, বিভিন্ন এলাকায় এই গাছ তারা দেখেছেন এবং দেখছেন।

সরেজমিনে ঘুরে তানোর চৌবাড়িয়া সড়কের গুবির পাড়া কারিগরি কলেজের সামনের রাস্তা থেকে উত্তর দিকে বেশ কিছু দূর পর্যন্ত রাস্তার দু ধারে, মালার মোড়ের কোল্ড স্টোরের সামনে ও দক্ষিণের রাস্তার দু’ ধারে মুন্ডুমালা সড়কের যুগিশো নামক স্থানে, বুড়াবুড়ি তলা নামক স্থানসহ তানোর বিল কুমারী বিলের সেতুর সংযোগ সড়কের পশ্চিমের রাস্তায় কিছু অংশের দু’ ধারে এই পার্থেনিয়াম গাছ দেখা গেছে।

মালার মোড়ের চায়ের দোকান্দার আব্দুল আইয়ুব আলীকে ওই গাছ দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয় এই গাছ বিষয়ে। তিনি বলেন, এটা জংলি গাছ নাম জানিনা জানিয়ে তিনি বলেন, এই গাছে আত দিলে বা গায়ে ঠেকলে চুলকায় এবং গায়ের বিভিন্ন স্থানে চাকা চাকা হয়ে ফুলে উঠে।

তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের বিভিন্ন স্থানেও দেখা যাচ্ছে এই গাছ। তথ্য অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্থেনিয়াম’ সূর্যমুখী উপজাতির উদ্ভিদ যার জন্ম মেক্সিকোতে। কিন্তু বর্তমানে বাংলা তথা সারা ভারতের সর্বত্র ভয়ঙ্কর বিপদজনক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পার্থেনিয়াম গাছ, বাঁচে তিন থেকে চার মাস।

এই সময়ের মধ্যেই তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। পার্থেনিয়ামের একটি গাছ ৪ থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দিতে পারে। এই বীজ এতই ছোট যে সাধারণত গবাদি পশুর গোবর, গাড়ির চাকার বা জুতা, স্যান্ডেলের তলার কাদামাটি, সেচের জল ও বাতাসের সঙ্গে এর বিস্তার ঘটে।

বিশেষজ্ঞদের মতে,পার্থেনিয়ামে রয়েছে সেসকুইটারপিন ল্যাকটোনস নামক টক্সিন বা বিষ যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর। পার্থেনিয়াম আগাছা ফসলি জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে দেয়।

পার্থেনিয়াম আগাছাযুক্ত মাঠে গবাদি পশু চরানো হলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে হাত-পা চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং পরে ত্বকের ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারেন।

১০ মিটার দূর থেকে পার্থেনিয়ামের ফুলের রেণু মানুষের এলার্জি, হাঁপানি, চর্মরোগ, ব্রঙ্কাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। এই আগাছা ৭০ শতাংশ মানুষের চর্মরোগ, ৩০ শতাংশ মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়াম জনিত বিষক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ১২ জন মারা গেছেন।

বিশেষজ্ঞরা পার্থেনিয়ামন গাছ থেকে সকলকে সাবধানতা অবলম্বনের কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন, ১, পার্থেনিয়াম গাছে কোনো ভাবেই হাত দেবেন না এবং বাচ্চাদের দূরে রাখতে হবে। ২. পার্থেনিয়াম সাফাই অভিযানে সবসময় মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে থাকবেন। এছাড়া ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরে থাকা ভালো। ৩. সাফাইয়ের পর জামাকাপড় ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন ও নিজে স্নান করে বাড়িতে ঢুকবেন।

পার্থেনিয়াম গাছ ধ্বংস করার পরামর্শও দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা, পার্থেনিয়াম গাছের গায়ে কেরোসিন স্প্রে করলে পার্থেনিয়াম খুব তাড়াতাড়ি মারা যায়। তবে, এতে অনেক অসুবিধা আছে, যেমন- পদ্ধতিটি ব্যয়সাপেক্ষ, কেরোসিন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়লে পানি নষ্ট হবে।

তাই খুব কম খরচে এটি বিনাশ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ৪ থেকে ৫ লিটার পানি ১ কেজি নুন ভালো করে মিশিয়ে গাছের পাতায় ও গোড়াতে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে স্প্রে করলে ২ দিনের মধ্যে পার্থেনিয়াম গাছ মারা যায়।

অসচেতনতার সুযোগ নিয়েই পার্থেনিয়াম এত দ্রুত বংশবিস্তার করছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা। তাই চারপাশ পার্থেনিয়াম মুক্ত রাখা ও সচেতনতা ছড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS