শিশুশ্রম থাকলে অর্থনৈতিক নৈতিকতা থাকে না — সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

সোনালী ডেস্ক:সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, যেসব সমাজে শিশুশ্রম রয়েছে, সেসব সমাজে অর্থনৈতিক নৈতিকতা থাকে না। শিশুশ্রম কোনোভাবেই সম্মানজনক নয়। এটি শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করে এবং একটি জাতির ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করে তোলে।
শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে ‘শিশুশ্রমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের নয়, সমাজের’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। অনুষ্ঠানে সহায়তা করেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং তত্ত্বাবধানে ছিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শারমীন এস মুরশিদ বলেন, বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতি ছিল সর্বব্যাপী।
প্রতিটি প্রকল্প দুর্নীতির কবলে পড়েছিল, যা অগ্রগতির শিকড় কেটে দিয়েছে। বাল্যবিয়ের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৬ বছরে নামিয়ে আনা হয়। এটি ছিল ভয়াবহ একটি উদাহরণ। তিনি আরও বলেন, শুধু আইন করে শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব নয়। দরকার দারিদ্র্য বিমোচন এবং সমন্বিত প্রয়াস।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ও আইএলও বাংলাদেশ অফিসের শ্রম প্রশাসন বিভাগের প্রধান নীরান রামজুঠান শিশুশ্রম নিরসনে সচেতনতা ও কাঠামোগত সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সরকারের সময়ে শিশুশ্রম নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। দুই দফায় ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পগুলোর সঠিক সুফল জনগণ পায়নি।
তিনি বলেন, দুর্নীতির যেন পালাবদল না ঘটে, সেজন্য আগামীতে সুশাসন ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা জরুরি। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি এবং পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ১১ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, পথশিশুদের ৯৪ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নেই এবং ৫৮ শতাংশের জন্মসনদও নেই। ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিক দল।
বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপ-সচিব রোকেয়া পারভীন জুই, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাবেক বিতার্কিক ড. এস. এম. মোর্শেদ, শিশুশ্রম বিশেষজ্ঞ আফজাল কবির খান এবং সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত রিপন। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার টাকা ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকা এবং এর সঙ্গে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়।