ঢাকা | জুন ২৩, ২০২৫ - ৪:১৯ পূর্বাহ্ন

বগুড়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী মতিন গ্রেপ্তার

  • আপডেট: Sunday, June 22, 2025 - 11:56 pm

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বসিলার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রোববার দুপুরে পাঠানো এক বার্তায় জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।  মতিন জেলা শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার মৃত মজিবর রহমানের ছেলে এবং আলোচিত নারী নির্যাতনকারী ধর্ষক সাজাপ্রাপ্ত তুফান সরকারের বড় ভাই।

সূত্রের দাবি, ২০০০ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে বেআইনি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন আব্দুল মতিন। এরপর পুলিশের প্রতিবেদন ও যাবতীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে ২০০৭ সালে আদালত কর্তৃক ২৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত হন তিনি। কয়েক বছর সাজাভোগ করার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর শীর্ষ মাদক কারবারি পরিবারের সন্তান খ্যাত মতিন জেলা যুবলীগ সভাপতি মঞ্জুরুল আলম মোহনের সহযোগিতায় বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের পদ লাভ করেন।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তিনি মাদক কারবারের পাশাপাশি চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডার বাণিজ্য, হাট-বাজার ইজারা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

সে সময় হত্যা, অস্ত্র ও মাদক মামলা থাকা সত্ত্বেও তিনি আওয়ামী লীগের কতিপয় সুবিধাবাদী নেতার প্রভাবে স্থানীয় সরকার ও জাতীয়সহ বিভিন্ন ভোট ডাকাতিতে অংশ নেন।

পরবর্তীতে বেআইনিভাবে প্রভাব খাটিয়ে তিনি বগুড়া আন্ত জেলা ট্রাক মালিক সমিতি ও জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। পুলিশ ও একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল মতিন গা ঢাকা দেন।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে দুদকের করা একটি মামলায় পলাতক থাকায় গত ১১ মার্চ তার অনুপস্থিতিতে বগুড়ার বিশেষ জজ আদালত তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত তাকে ২ কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকা জরিমানাদেশ দেন।

এর আগে তৎকালীন র‌্যাব বগুড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র এএসপি সুমিত চৌধুরী ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট আব্দুল মতিনকে তার আস্তানা সুইপার কলোনি এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ গ্রেপ্তার করে।

সে সময় আব্দুল মতিনের জন্য র‌্যাব কর্মকর্তা সুমিত চৌধুরীর বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে মিছিল ও সমাবেশ করে অন্যত্র বদলিসহ চাকরিচ্যুত করার প্রচেষ্টা চালায় জেলা যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের শীর্ষ নেতারা।

জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইকবাল বাহার জানান, এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসী মতিনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনসহ মোট ১৮ মামলায় আসামি হিসেবে জানা গেছে।

পট পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করেন তিনি। সবশেষ রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন বসিলার একটি বাসায় লুকিয়ে থাকার সংবাদ পেয়ে শনিবার (২১ জুন) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তাকে ওই বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি মতিনের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালত আবেদন করা হয়েছে।

অপরদিকে, পৃথক একটি অভিযানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন নবাবকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা ভাটারা থানা পুলিশ। গত শনিবার মধ্যরাতে রাজধানী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান বাসির জানান, আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন নবাবের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। নবাবের বিরুদ্ধে জায়গা ও বাড়ি দখলসহ ক্লিনিক ব্যবসায় নানারকম বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকায় জাকির হোসেন নবাবকে দেখে স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে রাজধানীর ভাটারা থানা-পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বগুড়া পুলিশের কাছে পাঠানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS