ঢাকা | জুন ২২, ২০২৫ - ৪:৫৫ অপরাহ্ন

নারীদের তৈরি আমচুর বাণিজ্যিকভাবে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রান্তে

  • আপডেট: Sunday, June 22, 2025 - 1:23 am

শিবগঞ্জ (চাঁপাই) প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের শতাধিক বছরের পুরানো একটি ঐতিহ্য নারীদের তৈরি করা আম থেকে আমচুর। যা শিবগঞ্জের নয়, জেলাতে একটি কুটির শিল্প বলে পরিচিত।

জানা গেছে- শিবগঞ্জে আম থেকে আমচুর তৈরি করে সহস্রাধিক নারী কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয় করা টাকা দিয়ে মেয়েদের লেখাপড়া ও সংসারের অন্যান্য কাজে খরচ করে থাকে। আম থেকে আমচুর তৈরি করতে বেশ পরিশ্রম করতে হয় নারীদের।

তবে আমচুর তৈরি করতে আম কিনতে হয় না। ঝড়, শিলাবৃষ্টি, তাপদাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিবগঞ্জে প্রচুর আম কুড়িয়ে এ আমচুর তৈরি করা হয়। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ও নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি বাগান থেকে আম কুড়িয়ে আমচুর তৈরি করে।

এ বছর গ্রামে গ্রামে তৈরি করা আমচুর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। প্রায় হাজার খানেক ফেরিওয়ালা দাঁড়ি পাল্লা ও বস্তা নিয়ে সাইকেলযোগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে আমচুর ক্রয় করে। এসব আমচুর এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আম বাজারে কানসাটের গোপালনগর মোড়ে বড় বড় আড়তে বিক্রি করে।

লাভ হয় প্রতি কেজিতে প্রায় ১০-১৫ টাকা। একেকজন ফেরিওয়ালা প্রতিদিন নিম্নে ৩০ কেজি ও ঊর্ধ্বে ৫০ কেজি আমচুর আড়তে বিক্রি করতে পারেন।

সরজমিনে ফেরিওয়ালা শ্যামপুর ইউনিয়নের চামা গ্রামের অওয়াল জানান, আমের মৌসুমে মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাস সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে কেজি প্রতি ৮০-৯০ টাকা দরে ৩০-৪০ কেজি আমচুর কিনে কানসাট গোপালানগর মোড়ে আড়তে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন আয় হয় ৫০০-৬০০ টাকা।

শুধু আমাদের গ্রামে প্রায় শতাধিক ফেরিওয়ালা আমচুর কিনে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে। একই কথা জানালেন মোবারকপুরের কবির উদ্দিন, কলাবাড়ির আবুল কালাম আজাদ, শ্যামপুরের শরিফ, শাহবাজপুর গ্রামের নয়ন আলি, কানসাটের জাব্বার আলি, পারচৌকা গ্রামের রাসেল আলি ও সাদ্দাম হোসেনসহ আরও অনেকেই।

আমচুর তৈরিকারক মনাকষার গৃহবধূ রোকেয়া বেগম, মোবারকপুরের বৃষ্টি বেগম জানান, বাগান থেকে কুড়িয়ে আনা নষ্ট আমগুলো চিরচির করে কেটে ঘরের চালাই বা উঠানে কয়েকদিন শুকিয়ে আমচুর তৈরি করতে হয়। বাড়তি কোন ঝামেলা নেই। তবে বৃষ্টির পানিতে ভিজলে রং নষ্ট হয়ে যায়। তাই সতর্ক থাকতে হয়।

এ আমচুর গ্রামে ফেরিওয়ালাদের কাছে বিক্রি করে কেজি প্রতি ৮০-৯০ টাকা পাই। যা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাড়ার খরচ ও নিজের পোশাক ক্রয় করি। কানসাটের গোপালনগর মোড়ের এক আড়ত মালিক রজব হোসেন জানান, প্রায় ২৫-২৬ বছর থেকে আমি আমচুরের পাইকারীর ব্যবসা করি।

প্রায় ২৫০ জন ফেরিওয়ালার কাছ থেকে আমচুর ক্রয় করি। তারা প্রতিদিন প্রায় এক মণ থেকে ৫০ কেজি বা তারও বেশি আমচুর দেয়। মৌসুমে অল্প পুঁজিতে খরচ বাদে ৫-৬ লাখ টাকা আয় করতে পারি। ক্রয় করা আমচুরগুলো দেশের কুমিল্লা, ঢাকা, নোয়াখালী ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ট্রাক যোগে বড় বড় পার্টির কাছে বিক্রি করি।

আড়তদার গোলাম রসুল বলেন, এখানে প্রায় ১০টি আড়তে প্রায় এক হাজার ফেরিওয়ালারা আগ্রহ সহকারে এ ব্যবসা করে। কারণ এখানে টাকা লেনদেন ও ওজনে কোন হয়রানি নেই। যেখানে আমের মণ ধরা হয় ৪৫ থেকে ৫০ কেজিতে সেখানে আমচুরের মন ধরা হয় মাত্র ৪১ কেজিতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী উদ্যোক্তা বলেন, ভাল মানের এ কুটির শিল্পের স্বাস্থ্য সম্মতভাবে সম্প্রসারণের জন্য গ্রাম্য নারীদের বেশি বেশি করে প্রশিক্ষণের জন্য প্রশাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উম্মে সুমাইয়া বলেন, নারীদের তৈরি করা আমচুর এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কুটির শিল্পে নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS