ঢাকা | জুন ২২, ২০২৫ - ২:৫৪ পূর্বাহ্ন

বিনামূল্যের অতিরিক্ত পাঠ্যবইয়ে অসাধু চক্র হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল টাকা

  • আপডেট: Saturday, June 21, 2025 - 11:45 pm

সোনালী ডেস্ক: বিনামূল্যের অতিরিক্ত পাঠ্যবইয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অসাধু চক্র। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের অতিরিক্ত চাহিদার পাঠ্যবই ছাপিয়ে গত ১৬ বছরে সরকারের ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে।

শিক্ষাখাতের সাথে জড়িত একটি অসাধু চক্র প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত পাঠ্যবই কালোবাজারিতে অধিক মূল্যে বিক্রি করে ওই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওই চক্রের সাথে একশ্রেণির উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষক জড়িত। বছরের শুরুতে পাঠ্যবইয়ের সঙ্কটকে পুঁজি করে গড়ে উঠে ওই অসাধু চক্র।

তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কঠোর নজরদারিতে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি কমেছে। তাতে সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বিনা মূল্যে বই সরবরাহ করে আসছে। গত জানুয়ারিতে এক অভিযানে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ছাপা দুই ট্রাকভর্তি প্রায় ১০ হাজার সরকারি বই জব্দ করা হয়। প্রতি বছরই কত সংখ্যক বই ছাপানো হবে তা উপজেলা, থানা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে আসা বইয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক হয়।

কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিযোগ, মাঠ থেকে বইয়ের চাহিদা আসে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি। তাতে প্রতি বছর গড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি অতিরিক্ত বই ছাপাতে হয়। তাতে সরকারের ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হতো। সেক্ষেত্রে এনসিটিবিও খুব একটা যাচাই করতো না। তাতে বেশি বই ছাপা হওয়ায় খরচও বেশি হতো।

কিন্তু ছাপানো সব বই কাজে লাগত না। এবার এনসিটিবি চাহিদা তৈরির কাজে যাচাই-বাছাই করেছে বেশি। ফলে এবার মোট বইয়ের সংখ্যা কমেছে। এনসিটিবির একটি বিশেষ টিম গত জানুয়ারি মাস থেকেই তিনটি ভিন্ন পদ্ধতিতে বইয়ের চাহিদা যাচাই করে। প্রথমে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাহিদা পাঠানোর সময় সতর্ক থাকতে বলা হয় এবং অতিরিক্ত চাহিদার প্রমাণ মিললে শিক্ষকের এমপিও স্থগিতসহ কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

এরপর মাঠ থেকে আসা চাহিদা শিক্ষাবোর্ড থেকে দ্বিতীয় দফায় মেলানো হয়। আর তৃতীয়টি ছিল এনসিটিবির নিজস্ব অ্যাপসের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে একাধিক ধাপে তা যাচাই করা হয়। তাছাড়া এনসিটিবি ৩২টি টিম গঠন করে সারা দেশে পাঠায়। তারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দফায় দফায় মিটিং করে এবং অতিরিক্ত চাহিদা প্রদান করলে কঠোর শাস্তির বার্তা দেন। এনসিটিবির কঠোর পদক্ষেপের ফলে শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা সতর্ক হন এবং গত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি বইয়ের চাহিদা কম আসে।

সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে চলতি বছরের জন্য সাড়ে ৩৯ কোটির বেশি বই ছাপানো হয়েছে। তার মধ্যে মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) মোট বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি। ওসব বইয়ের মধ্যে দশম শ্রেণির জন্য প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ বই ছাপানো হয়। নবম-দশম শ্রেণির জন্য একই বই; কিন্তু এ বছর শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের কারণে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেয়া হয়েছে। এটি শুধু এক বছরের জন্যই।

আগামী বছর দশম শ্রেণির জন্য নতুন বই ছাপানো হবে না। ফলে প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ বই কমে যাবে। তাছাড়া আগামী বছরের জন্য বইয়ের চাহিদা কম এসেছে মাধ্যমিকে ৩ কোটি ৮০ লাখের মতো। মাধ্যমিকে আগামী বছরের জন্য মোট ২১ কোটি ৪০ লাখের মতো বইয়ের চাহিদা এসেছে। আর চলতি বছরের জন্য প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজারের মতো। প্রাথমিকে এবার ৭০ লাখের মতো কম চাহিদা এসেছে।

তবে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির প্রতিটি বই ছাপার খরচ তুলনামূলক কম হলেও নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে খরচ বেশি। একেকটি বই ছাপার কাজে গড়ে ৬০ টাকা খরচ হয়। ওই হিসাবে আগামী বছর মাধ্যমিকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা কম খরচ হতে পারে। তাছাড়া প্রাথমিকেও খরচ ৪০ কোটি টাকার মতো কম হবে।

সূত্র আরো জানায়, শিক্ষার্থীদের হাতে চলতি শিক্ষাবর্ষে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে এনসিটিবির মাত্রাতিরিক্ত দেরি হয়। শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাসের মাথায় সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করা হয়। আর বই পেতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে।

তবে অন্যান্য বছরের মতো এবারও দোকানে অনেকটা সহজলভ্য ছিল। বিভিন্ন স্থানে বই বিক্রির দোকানে পাওয়া যায় সরকারি বিনামূল্যের প্রথম থেকে দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই। সারা দেশ থেকে অতিরিক্ত চাহিদার পাঠ্যবই ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। প্রাথমিকের প্রতি শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের প্যাকেজ দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর মাধ্যমিকের প্রতি শ্রেণির পাঠ্যবই প্যাকেজ সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

কিন্তু আগামী বছরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ এনসিটিবি এবার আগেভাগেই শুরু করেছে। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক শ্রেণির দরপত্র আহ্বানের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে সব পাঠ্যবই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি।

এদিকে এ ব্যাপারে এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বইয়ের চাহিদার ক্ষেত্রে এনসিটিবি এবার বেশ সতর্ক ছিলো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে অনলাইনে মিটিং করা হয়েছে। প্রকৃত চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত চাহিদা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায় নিতে হবে বলে একাধিকবার সতর্ক করা হয়। শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা মিলিয়ে দেখা হয়েছে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS