ঢাকা | জুলাই ১৩, ২০২৫ - ২:৪৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

প্লাস্টিকের রাজত্বে বেতশিল্পের কবর

  • আপডেট: Saturday, June 21, 2025 - 1:16 am

সাইদ সাজু, তানোর থেকে: রাজশাহীতে প্লাস্টিকের রাজত্বে অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ ও বেতশিল্প। তবে তানোর উপজেলার গুটি কয়েকটি গ্রামে এখনো টিকে আছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই বাঁশ ও বেতশিল্প।

তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিকের আসবাবপত্রের কাছে ক্রমেই সেই চিরায়িত ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে। বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় এখন কুটির শিল্পীদের দুর্দিন চলছে। ফলে অনেক কুটির শিল্পী এখন অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

এক সময় কুটির শিল্পীরা বাঁশের তৈরি কুলা, ঝুড়ি, ঝাঁকা, ডালি, মাথাল ও ধান রাখার ঢোল, আড়ি (বড় ডালির মতো) কাঠাসহ (ছোট আকারের ডালি) জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

তখনকার দিনে গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে বাঁশের তৈরি কুটিরশিল্পের ব্যবহার থাকায় শিল্পীদের যথেষ্ট কদর ছিল। কিন্তু দিন দিন বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা।

আউশ, আমন ও বোরো ধানের মৌসুমে উপজেলার মুণ্ডুমালা মাহালিপাড়া, চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের বেড়নপাড়া ও তানোর পৌর এলাকার গোকুল-মথুরা গ্রামের অনেক কুটির শিল্পী তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘরে বসে বাঁশের জিনিসপত্র কুলা, ঝুড়ি ও ধান রাখার ঢোলসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করতেন।

আর তাদের তৈরিকৃত জিনিসপত্র পুরুষ লোকেরা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার এবং গ্রামে গ্রামে গিয়ে তা বিক্রি করতেন।

উপজেলার মুণ্ডুমালা মাহালিপাড়ার কুঠির শিল্পী জজম্যান, জুয়াকিম, অ্যান্নেলুস জানান, এখন বাঁশ পাওয়া দুর্লভ হয়ে পড়েছে এবং দামও চড়া। ফলে বাঁশের দাম ও পরিশ্রম অনুযায়ী ভালো দাম পাওয়া যায় না।

এতে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। উপজেলার গোকুল, মথুরা গ্রামের কুটির শিল্পী কামনা রাণী, মেনোকা রাণী বলেন, এই গ্রামে কুড়ি বছর ধরে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন ধরনের ঝাঁকা-ডালি তৈরির মাধ্যমে বাঁশ শিল্পটিকে ধরে রেখেছি। এখন আমাদের তৈরি জিনিসপত্রের কদর আগের মতো নেই।

প্লাস্টিক দ্রব্য জায়গা করে নিয়েছে। তাছাড়া এ কাজে পুঁজির প্রয়োজন। তাতে সরকারিভাবে সহযোগিতা পাওয়া গেলে কুঠিরশিল্পের জিনিসপত্র তৈরি করতে সহায়ক হবে বলে তারা জানান।

মুণ্ডুমালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নেতা কামেল মার্ডি জানান, আশির দশকে মুণ্ডুমালা মাহালিপাড়ায় বাঁশ শিল্পের রমরমা ব্যবসা ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির তৈরি প্লাস্টিকের নানান দ্রব্যের কাছে তাদের কদর কমেছে। তাছাড়া এখন বাঁশের দামও বেশি।

সে তুলনায় বাঁশের দ্রব্যের দাম কম। তবে সরকারি সহায়তা পেলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিয়াকত সালমান বলেন, এই শিল্পের যারা এখনো জড়িত থেকে জীবকা নির্বাহ করছেন, তারা যদি আবেদন করেন তবে তাদের সহযোগিতা করা হবে।