ঢাকা | জুন ২১, ২০২৫ - ৫:৩৮ পূর্বাহ্ন

সুরক্ষিত হোক দেশের বাকস্বাধীনতা

  • আপডেট: Friday, June 20, 2025 - 11:42 pm

সম্পাদকীয়

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের শাসনের পতন হয় এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বহুল আলোচিত-সমালোচিত, দমন-পীড়নমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।

অবশেষে দায়িত্ব নেয়ার প্রায় ৯ মাস পর সাইবার নিরাপত্তা আইন বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইন করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

অনেক দিন ধরে আলোচনা ও বেশ কয়েকবার খসড়া পরিবর্তনের পর গত মঙ্গলবার ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা বাদ দেয়া হয়েছে। মূলত এসব ধারাতেই বিগত সরকারের সময় ৯৫ শতাংশ মামলা হয়েছিল।

এখন বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিল হওয়ায় সেসব মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই খারিজ হয়ে যাবে। বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিল হলেও বর্তমান সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য বা কনটেন্ট, যা সহিংসতা উসকে দিতে পারে, তাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

এছাড়া প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে ইন্টারনেটকে প্রথমবারের মতো মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অনলাইন জুয়া, সাইবার জগতে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। যেখানে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।

সংবিধানে নাগরিকের সুরক্ষার কথা থাকলেও বিগত সরকার তা চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে। স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, নাগরিকের ওপর কতটা নিপীড়ন চালানো হয়েছে।

এর আগে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা প্রয়োগ করে এক হাজার ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ধারা বাংলাদেশে ভিন্নমত দমনের প্রধান হাতিয়ার। নতুন অধ্যাদেশে পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার এবং বিচার-পূর্ব আটকের বিধানগুলো রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

এগুলো বহাল থাকলে নতুন অধ্যাদেশের অপব্যবহারের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হবে না। অধ্যাদেশটি কার্যকর হওয়ার আগে এ বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এটি যেন নিয়ন্ত্রণমূলক ও নজরদারির অধ্যাদেশে পরিণত না হয়, মতপ্রকাশের নাগরিক অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না করে।

আবার আইন শিথিল করতে গিয়ে অপরাধীদের সুযোগের পথ যেন প্রশস্ত না হয়, সে বিষয়েও সচেতন থাকা প্রয়োজন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে এ অধ্যাদেশ যেন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS