ঢাকা | জুন ২১, ২০২৫ - ৫:২৫ পূর্বাহ্ন

মুনিরুজ্জামানের ঘর যেন জাদুঘর সংগ্রহে আড়াই হাজার দুর্লভ বস্তু

  • আপডেট: Friday, June 20, 2025 - 11:54 pm

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: ছোট্ট তিন কক্ষের একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বাস করেন ব্যবসায়ী মুনিরুজ্জামান আল ফারুক নূরে এলাহী।  প্রতিটি কক্ষের আলমিরা, শোকেস আর দেয়ালের তাকে তাকে সাজানো রয়েছে দূুর্লভ সব সামগ্রী। সেই বাদশাহী আমল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলের প্রাচীন ও দুর্লভ বস্তুতে কক্ষগুলো সাজিয়েছেন তিনি।

সংগ্রহশালায় রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার সামগ্রী। সিরাজগঞ্জ শহরের কলেজ রোড এলাকায় মুদ্রণ ব্যবসায়ী মুনিরুজ্জামান আল ফারুক নূরে এলাহীর বাড়ির তিনটি কক্ষকেই বানিয়েছেন যাদুঘর। তার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সত্তরের দশকের পুরোনো থ্রি-ব্র্যান্ড সচল রেডিও। সুইচ টিপতেই বেজে ওঠে মরমী শিল্পী আব্দুল আলীমের গান।

৫৪ বছর আগে ওই রেডিওতেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ও সংবাদ শোনা হতো বলে জানান মুনিরুজ্জামান।  আরেকটি তাকে দেখা যায় নব্বই দশকের জনপ্রিয় ক্যাসেট প্লেয়ার। সেটিও সচল রয়েছে। শোকেসের তাকগুলোতে এমন বেশ কয়েকটি বিলুপ্ত প্রায় রেডিও এবং টেপ রেকর্ডার রয়েছে।

সংগ্রহে রয়েছে আশির দশকে বিলুপ্ত হওয়া গ্রামোফোন যাকে বাংলায় কলের গান বলা হতো। সচল এ গ্রামোফোনে প্লেটের মতো সিডি ঢুকানো হলেই বেজে ওঠে গান।

এছাড়া দেখা যায়, উটের হাড়ের তসবিহ, রাজা-বাদশাহর আমলের কবিরাজি দাওয়াই সংরক্ষণ ও সেবন করার পাত্র, জমিদারি আমলের হুক্কা, কাসা, তামা ও পিতলের তৈরি কুপি বাতি, অর্ধশত বছরের পুরনো দেয়াল ঘড়ি, টেলিফোন, বুদ্ধমূর্তি, গোপাল মূর্তি, স্বাধীনতা পরবর্তী সাংবাদিকদের ব্যবহৃত ক্যামেরা, ভয়েস রেকর্ডার, টাইপ মেশিন, বিভিন্ন দেশের প্রাচীন মুদ্রা, বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রের প্রাচীন ডাকটিকিট, অসংখ্য পুরোনো চিঠি, ম্যাচ বক্স ইত্যাদি।

মুনিরুজ্জামানের সংগ্রহে রয়েছে অর্ধ ইঞ্চি আয়তনের কোরআন শরীফ। সেই সঙ্গে দেড় ইঞ্চি ও সোয়া ইঞ্চি আয়তনের একাধিক কোরআন শরীফও রয়েছে তার সংগ্রহশালায়।

জানা যায়, মুনিরুজ্জামান আল ফারুক নূরে এলাহীর বাবা ভাষা সৈনিক আবুল ফাত্তাহ নূরে এলাহী, ফুপু ভাষা সৈনিক মেহের নিগার নূরে এলাহী এবং চাচা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবুল কাশেম নূরে এলাহী। ১৯৪০ সালে “নূরে এলাহী প্রেস” নামে সিরাজগঞ্জ শহরে প্রথম মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন মুনিরুজ্জামানের দাদা আবুল মুনসুর নূরে এলাহী। এটি ছিল উত্তরবঙ্গে প্রথম কোনো মুসলমানের মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠান। তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে সেই শিল্পকেই পেশা হিসেবে ধরে রেখেছেন তিনি।

বিরল সব সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে মুনিরুজ্জামান আল ফারুক নূরে এলাহী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ডাকটিকিট কিনতাম। আমি এ টু জেড সব দেশের ডাকটিকিট সংগ্রহ করেছি। স্কুল জীবনে প্রতি বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ হতো। তখন একটা করে প্রজেক্ট আবিষ্কার করে প্রতি বছরই প্রথম হতাম। সেই সুবাদে সরকারি খরচে বিভিন্ন স্থানে আমাকে ভ্রমণ করানো হতো। একবার আমাকে জাতীয় জাদুঘরে নেয়া হয়।

জাদুঘর দেখেই আমার একটা নেশা ধরে যায়। আমি নিজেও তো এমন জিনিসপত্র সংগ্রহ করে রাখতে পারি। সেখান থেকেই সংগ্রহের প্রতি আগ্রহ জন্মে। দীর্ঘদিন ধরে আমি এ সংগ্রহ করে আসছি। যখন যেখানে যে জিনিস পাই সেটা সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। এর জন্য আমার ওপর অনেক ঝড়ও বয়ে গেছে, অনেকে আবার পাগলও বলে।

তিনি বলেন, ৪৪ বছর ধরে আমি সংগ্রহ করে চলেছি। বর্তমানে আমার সংগ্রহশালায় আড়াই হাজারের বেশি আইটেম রয়েছে।   মুনিরুজ্জামান আল ফারুক নূরে এলাহী বলেন, যদি নিজস্ব কোনো বাসা করতে পারি, সেখানে একটি কক্ষে গ্যালারি তৈরি করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেব। তবে সরকার থেকে সহযোগিতা পেলে গ্যালারি করার আশাটা দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS