ঢাকা | জুন ১৯, ২০২৫ - ২:২০ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গু প্রতিরোধে দরকার প্রশাসনের নেতৃত্বে পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি

  • আপডেট: Wednesday, June 18, 2025 - 10:32 pm

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে ডেঙ্গু এখন আর কেবল মৌসুমি রোগ নয়-বরং প্রতি বছরই এটি একটি পুনরাবৃত্ত মহামারির রূপ নিচ্ছে। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যখন এই রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তা শুধু একটি স্বাস্থ্যগত সঙ্কট নয়, বরং একটি সামাজিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ হিসেবেও আবির্ভূত হয়।

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। মঙ্গলবারের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এই উপজেলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। মে মাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৩ শতাধিক রোগী।

আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, রাজনীতিক, নারী ও শিশুসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই দুই ওয়ার্ডেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ছয় শতাধিক, যা স্থানীয়ভাবে এক ধরনের মহামারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ মশকনিধন, পানি নিষ্কাশন ও ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করলেও, বাস্তবতা বলছে-এই পদক্ষেপগুলো ঘটনাপ্রবাহের পেছনে ছুটছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রবণতা এই সঙ্কটকে আরও গভীর করেছে।

সাবেক কাউন্সিলরদের বর্ণনায় প্রতীয়মান হয়, এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এটি এককভাবে যথেষ্ট নয়। ডেঙ্গু দমন শুধুমাত্র স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নয়-এটি একটি বহুমাত্রিক রাষ্ট্রীয় ইস্যু, যেখানে প্রয়োজন আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়, টেকসই পরিকল্পনা এবং সারাবছর চলমান প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম।

বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই যেভাবে ‘ফগার মেশিন’ চালিয়ে দায়সারা কার্যক্রম দেখা যায়, তা কোনোভাবেই স্থায়ী সমাধান নয়। প্রতিবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটার পর ‘উদ্যোগ’ নেয়ার সংস্কৃতি থেকে সরে এসে আমাদের এখন কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় মনোনিবেশ করতে হবে।

এছাড়া, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘরে ঘরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, জমে থাকা পানি অপসারণ, শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগে সাবধানতা, মশারি ব্যবহারের অভ্যাস-এসব ব্যক্তিগত উদ্যোগই একটি বড় সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

তবে এসব কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করতে হলে দরকার প্রশাসনের নেতৃত্বে একটি পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি। দাউদকান্দির পরিস্থিতি আমাদের আরও একটি বাস্তব শিক্ষা দেয়-এলাকার অবকাঠামোগত দুর্বলতা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবর্জনার সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ডেঙ্গু বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

সুতরাং, কেবল হাসপাতালসমূহকে প্রস্তুত রাখা নয়, বরং স্থানীয় পর্যায়ে জনস্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাও এই মুহূর্তে জরুরি। শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে নয়, বরং প্রতিরোধের দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করলেই কেবল এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS