ঢাকা | জুন ১৮, ২০২৫ - ৪:২৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ঈদযাত্রায় প্রাণহানি: স্বস্তির বদলে শোক

  • আপডেট: Tuesday, June 17, 2025 - 10:44 pm

সম্পাদকীয়

কোরবানির ঈদ বরাবরই দেশে জনস্রোতের সৃষ্টি করে। কর্মজীবী মানুষ ছুটে যান আপন ঠিকানায়। সেই যাত্রার অনিবার্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে সড়ক দুর্ঘটনা। এবছরও ব্যতিক্রম হয়নি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, ঈদের আগে ও পরে মোট ১৫ দিনে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৪১৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪২৭ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ১১৯৪ জন। শুধু সড়কেই প্রাণ গেছে ৩৯০ জনের।

এবারের ঈদযাত্রাকে অনেকে ‘স্বস্তিদায়ক’ বলতে চাইলেও পরিসংখ্যান বলছে অন্যকথা। আগের বছরের তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ২২.৬৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬.০৭ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ৫৫.১১ শতাংশ।

এ ভয়াবহ প্রবণতা কেবল মানবিক বিপর্যয়ই নয়, বরং আমাদের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার দুর্বলতাও স্পষ্ট করে। প্রতিবেদন বলছে, দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল-১৩৪টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৪৭ জন।

সড়কে মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য, অপ্রশিক্ষিত চালক, এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ চলাচল পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। ট্রাকের পেছনে লেগে যাওয়া, খাদে পড়ে যাওয়া, কিংবা পথচারীদের চাপা দেয়ার মত চিত্র প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে বেশ কিছু কাঠামোগত ও ব্যবস্থাগত ত্রুটি: রাস্তায় গর্ত ও বৃষ্টিজনিত ক্ষতি, পর্যাপ্ত রোড সাইন ও আলোর অভাব, মিডিয়ানের অনুপস্থিতি, ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, চাঁদাবাজি, উল্টোপথে যাত্রা, অদক্ষ চালক এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি।

এ সমস্ত বিষয় শুধু দুর্ঘটনা বাড়ায় না, বরং নাগরিক জীবনের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের প্রশ্নও তোলে। ঈদের সময় ছুটি কম হওয়ায় মানুষের ঘরমুখো যাত্রা একসাথে শুরু হয়, যার ফলে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয় সড়কে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি সুপারিশ করেছে ঈদের ছুটি অন্তত চারদিন বাড়ানোর, যা জনস্রোতের চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের আরও কিছু সময়োপযোগী সুপারিশ রয়েছে-মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত যান নিয়ন্ত্রণ, রাস্তায় আলোকসজ্জা বৃদ্ধি, দক্ষ চালক তৈরি, রোড মার্কিং ও ফুটপাত সংযুক্তকরণ, আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক ও মানসম্মত সড়ক নির্মাণ, চাঁদাবাজি বন্ধ ও ফিটনেসবিহীন যান স্ক্র্যাপিং।

এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন জরুরি, তবে তার চেয়েও জরুরি-রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা ও নীতি-নির্ধারকদের আন্তরিকতা। জনজীবনের নিরাপত্তা কোনো বিশেষ সময়ের বিষয় নয়, এটি প্রতিদিনের ন্যায্য অধিকার।

ঈদের আনন্দ যেন শোকের ছায়া না হয়ে দাঁড়ায়, সেজন্য এখনই আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনায় একটি দীর্ঘমেয়াদি, বাস্তবভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর সংস্কার শুরু করতে হবে। অন্যথায়, ঈদযাত্রার মূল্য এমন এক আতঙ্ক হয়ে উঠবে, যা ছুটি নয়, কেবল স্বজনহারা শোকই বয়ে আনবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS