ঢাকা | জুন ১৭, ২০২৫ - ২:৪০ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

মান্দায় বাড়ছে ইউক্যালিপটাসের বাগান, পরিবেশ-প্রকৃতি নিয়ে শঙ্কা

  • আপডেট: Monday, June 16, 2025 - 10:47 pm

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দা উপজেলায় ব্যাপকহারে তৈরি করা হচ্ছে ইউক্যালিপটাস গাছের বাগান। দ্রুত বৃদ্ধি ও কম পরিচর্যায় বড় হওয়ার কারণে কৃষক ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই গাছ চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। নার্সারীগুলোতেও রয়েছে এ গাছের চারার ব্যাপক চাহিদা।

প্রকারভেদে প্রতিটি চারা বিক্রি হয়ে থাকে ১০ থেকে ৫০ টাকায়। ইতিমধ্যে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষেণের স্বার্থে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা উৎপাদন, রোপণ ও বিক্রি  নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত ১৫ মে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্যালিপটাসের চারা রোপণের ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই গাছ বড় হয়ে যায়। বাজারে চাহিদা থাকায় কাঠ হিসেবে বিক্রি করেও ভালো অর্থ আসে।

এসব গাছ সাধারণত রাস্তার ধার, জমির আইল, নদীর পাড়সহ পতিত জমিতে ফলজ-বনজ গাছের বিকল্প হিসেবে রোপণ করা হচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, ইউক্যালিপটাস এক ধরনের একাকী বেড়ে ওঠা উদ্ভিদ, যা স্থানীয় প্রজাতির গাছ ও প্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থান করতে পারে না।

তাছাড়া এর শিকড় মাটির নিচের পানির স্তর দ্রুত নিঃশেষ করে ফেলে। পানির এই অতিরিক্ত ব্যবহার এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্বল্পতা তৈরি করতে পারে।

বর্তমানে কোনও নিয়ন্ত্রক নীতি না থাকায় যত্রতত্র এই গাছ রোপণ করা হচ্ছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ ও কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব আরও প্রকট হতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বন পুনরুদ্ধারের চিন্তা থেকে সামাজিক বনায়নকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে নানা কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে ইউক্যালিপটাসসহ বেশকিছু বিদেশি প্রজাতির দ্রুত বর্ধনশীল গাছ এ দেশে আসে।

পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে ‘সামাজিক বনায়ন’ কর্মসূচি এবং সরকারের বনবিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউক্যালিপটাস ও অন্যান্য বিদেশি গাছ ব্যাপকভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রথম এই গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যত্রতত্র গড়ে তোলা হয়েছে ইউক্যালিপটাসের বাগান। ফসলি জমির পাশে, জমির আইল, নদীরপাড়সহ পতিত জমিতে এ গাছের বাগান তৈরির এক রকম প্রতিযোগিতা চলছে।

সেখানে বাগান তৈরি করা হয়েছে তার চারপাশের জমিগুলোর বিশাল একটা অংশজুড়ে ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। নিরূপায় হয়ে অনেক কৃষক ফসল উৎপাদন বাদ দিয়ে ওইসব জমিতে এ গাছের বাগান তৈরি করছেন। উপজেলার দোডাঙ্গী

গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার জমির পাশে একজন কৃষক তার জমিতে ইউক্যালিটাস গাছের বাগান করেছেন। গাছগুলো বড় হওয়ায় আমার জমিতে আর ফসল ভালো হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আমিও এই গাছের চারা রোপণ করেছি।

এভাবে এ গাছের বাগান বাড়তেই আছে। পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার অভিযোগ করে বলেন, আমার জমির পাশে এ গাছের বাগান তৈরি করায় আমার জমির ফসল উৎপাদন অর্ধেক কমে গেছে। গাছগুলো কেটে নেয়া না হলে আমাকেও আগামিতে এ গাছের বাগান করতে হবে।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা’র রাজশাহী বিভাগের সম্বনয়ক তন্ময় কুমার স্যানাল বলেন, ইউক্যালিপটাস গাছ অত্যন্ত উচ্চমাত্রায় পানি শোষণ করে।

এর ফলে আশপাশের জমিতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ কমে যায়, যা কৃষিজ উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে জীববৈচিত্র হ্রাসসহ মাটি ক্রমেই অনুর্বর হয়ে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা যেখানে পড়ে সেখানে কোনো ঘাস জন্মায় না। পাখিরা বাসা বাধে না এই গাছে। এ গাছ চাষে সুপরিকল্পিত নীতিমালা প্রণয়ন করা না হলে আগামিতে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

জানতে চাইলে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়া প্রজ্ঞাপন জারীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ইউক্যালিপটাস গাছের চারা উৎপাদন, বিক্রি ও রোপণে নিষেধাঞ্জা দেয়া হয়েছে।

জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইউএনও শাহ আলম মিয়া আরও বলেন, উপজেলার কোনো দপ্তর যদি এ গাছের বনায়ন করে থাকে তাহলে দ্রুত সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ যদি নতুনভাবে এ গাছের বনায়নের চেষ্টা করে তাহলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS