এ বছরের ফলনে খুশি কৃষকরা: আলু তোলার পর ধান কাটা শুরু

সাঈদ সাজু, তানোর থেকে: রাজশাহীর তানোরে আলু তোলার পর রোপণকৃত বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ বছরের ফলন ও দামে খুশি স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘায় ধানের ফলন হচ্ছে (সাড়ে ৩৭ কেজিতে মন) ২৪ মন থেকে ২৬ মন পর্যন্ত। প্রতি মন ধান জমি থেকেই বিক্রি করছেন ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর তানোর উপজেলায় ১৩ হাজার ৩শ ৮৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিলো। আলু তোলার পর পুরো জমিতেই বোরো চাষ ধান করেছেন কৃষকরা।
বর্তমানে বেশির ভাগ জমিতে পানি জমে কাঁদায় পরিণত হওয়ায় শ্রমিকরা ধান কেটে মাঠ থেকে আনতে পারছেন না। অপরদিকে গাড়িতে বা ট্রাক্টরেও আনা যাচ্ছে না। ফলে কম্বাইন্ড হারভেস্টর নামের আধুনিক মেশিনে ধান কেটে অল্প সময়ের মধ্যেই মেইন সড়কের ধারে সরাসরি বস্তাবন্দি করা হচ্ছে।
বস্তাবন্দি করা ধান সড়কের ধার থেকেই ট্রাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাড়রা। ফলে, জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির এই কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন। তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির প্রাণপুর পাঠাকাটা গ্রামের আদর্শ কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, এ বছর আলু তোলার পর ওই জমির ১৫ বিঘাতে বোরো ধান চাষ করেছেন।
এর মধ্যে ৭ বিঘা জমির ধান মেশিনে কেটে মাঠ থেকেই বিক্রি করেছি। বাকি ৮ বিঘা জমির ধান দু’এক দিনের মধ্যেই কাটা হবে। তিনি বলেন, প্রতি বিঘায় মেশিন খচর দিতে হয়েছে ২ হাজার ৩ শ টাকা। শ্রমিক দিয়ে কাটলে সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খবর হতো। মেশিনে ধান কাটার কারনে খরচ কম হওয়ায় পাশাপাশি জমি থেকেই স্বল্প সময়ে জমি থেকেই বিক্রি করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিগা প্রতি ফলন হচ্ছে (সাড়ে ৩৭ কেজিতে মন) ২ মনের বস্তায় ১৩ বস্তা, প্রতি বস্তা ধান জমি থেকেই বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘা জমির ধানের দাম ২৬ হাজার টাকা থেকে ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাতা থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এ বছর প্রতি বিঘায় কৃষকের লাভ হচ্ছে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিনি আরও বলেন, জমিতে পানি জমে কাঁদায় পরিণত হয়েছে, এ কারণে শ্রমিকরা দান কাটতে পারছেন না। তাই আধুনিক কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা হচ্ছে। তানোর উপজেলার মাঠ জুড়ে এখন দোল খাচ্ছে পাঁকা বোরো ধানের শীষ। মাঠের চারি দিকেই পেকে গেছে আলু তোলার পর রোপণকৃত বোরো ধান।
সেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। মাঠের জমিতে পানি জমে কাঁদায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে জমি। এই মুহূর্তে এই ধান কেটে শ্রমিক দিয়ে তোলা কৃষকদের জন্য খুবই কষ্টকর। কৃষকদের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে ধান কাটা ও মাড়াই করা আধুনিক মেশিন কম্বাইন্ড হারভেস্টর নামের এই মেশিন। কৃষকদের উৎপাদন খরচ এবং সময় বাঁচাতে সক্ষম এসব প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে বলে এমনটাই জানিয়েছেন কৃষিবিদরা।
উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর এলাকায় ১০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন কৃষকদের দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মেশিনের মূল্য ২৫ লাখ টাকা। এসব আধুনিক কম্বাইন্ড হারভেস্টারের সাহায্যে ঘণ্টায় দেড় একর জমির ধান কাটা এবং একই সাথে মাড়াই কাজ সম্পন্ন করতে পারবে কৃষকরা।
এছাড়া এর আগে আরও ৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, মাঠের ধান পাকলেই কাটার জন্য দুশ্চিন্তা বেড়ে যেত। গ্রামে গ্রামে শ্রমিক খুঁজতে হতো। আর শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি ও খরচ বেশি হওয়ায় পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো এসব কৃষকদের।
তানোরে কম্বাইন্ড হারভেস্টর ১টি মেশিনের মালিক উপজেলার পাচন্দর ইউপির দুবইল গ্রামের বিমল বলেন, বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা থেকে আড়াই টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি। তিনি বলেন, প্রতিদিন ২০ বিঘা থেকে ২৫ বিঘা জমির ধান কাটা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, সরকারি ভূর্তুকিতে এই মেশিনটি কিনেছিলাম খরচ বাদে লাভ ভালোই হয়।
তিনি আরও বলেন, এই মেশিন ধান কাটার সুয়োগ না থাকলে কৃষকরা আলুর জমিতে রোপণকৃত বোরো ধান ঘরে তুলতে চরম বিপাকে পড়তে হতো। কৃষকদের চাহিদা মেটাতে হিমসিম খাচ্ছি। সময় সুযোগ বুঝে সিরিয়াল অনুযায়ী দান কেটে দিচ্ছি। তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, আলু তোলার পর রোপণকৃত বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে ফলন ও দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। এ উপজেলায় ১৫টি মেশিন দিয়ে কৃষকদের ধান কাটা হচ্ছে। এতে সময় ও খরচ অনেক কম লাগে বলে তিনি জানান।