মেয়েকে বিয়ে না দেয়ায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যা, সেই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে বহিষ্কার

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ায় স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় শাকিল আহম্মেদ (৪০) নামে অটোরিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জিতু ইসলামসহ ১৭ জনের নামে মামলা হয়েছে। এছাড়া ২৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী মালেকা খাতুন গত শনিবার রাতে সদর থানায় এ মামলা করেন।
পুলিশ এর আগেই দুই সহযোগীসহ জিতুকে গ্রেফতার করেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল জিতুকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে।
সদর থানার ওসি হাসান বাসির জানান, গ্রেফতার তিনজনকে গতকাল রোববার দুপুরে আদালতে হাজির করে ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
গ্রেফতার তিনজন হলেন- বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য বহিষ্কৃত সহ-সাধারণ সম্পাদক শহরের ফুলবাড়ির সেকেন্দার আলীর ছেলে জিতু ইসলাম (৪৩), তার সহযোগী একই এলাকার আবদুল আজিজের ছেলে মতিউর রহমান মতি (৩২) ও ফুলবাড়ি কারিগরপাড়ার কুতুব উদ্দিনের ছেলে শফিকুল হাসান বিপ্লব (৩৫)।
শাকিল আহম্মেদ বগুড়া শহরের শিববাড়ি শাহী মসজিদ লেনের মৃত হানিফ মিয়া সাজুর ছেলে। তিনি পরিবারসহ রানা নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থেকে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
পুলিশ, নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ি এলাকার জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জিতু আগে জেলা যুবলীগের রাজনীতি করতেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলে ঢুকে পড়েন। জিতু তার (শাকিল) অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। শাকিল এতে রাজি না থাকায় তার সঙ্গে জিতুর বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে শনিবার দুপুরের আগে জিতুর সঙ্গে শাকিলের হাতাহাতি হয়।
একপর্যায়ে শাকিল ছুরিকাঘাত করলে জিতুর হাত কেটে যায়। জিতুর হামলার ভয়ে শাকিল বেলা ৩টার দিকে তার বোনের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। এ সময় জিতুর নেতৃত্বে তার সহযোগী মতি, মোমিদুল, বিপ্লব, সুমনসহ কয়েকজন ১৫-২০টি মোটরসাইকেলে ওই বাড়িতে আসেন। তারা মারপিট না করার আশ্বাস দিয়ে টেনেহিঁচড়ে শাকিলকে বোনের বাড়ি থেকে বের করেন। এরপর তাকে ফুলবাড়ি এলাকায় করতোয়া নদীর নয়াঘাট এলাকায় নিয়ে যান।
সেখানে তারা শাকিলকে বেদম মারপিট করে ফেলে যান। স্থানীয়রা শাকিলকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত শাকিলের বড় বোন আশা ও খালাতো বোন জেসি বলেন, বয়স্ক জিতু ইসলাম তাদের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ভাতিজিকে দীর্ঘদিন ধরে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। এতে রাজি না হওয়ায় জিতু ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা বাড়ি থেকে শাকিলকে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।
তারা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই নেতাকর্মীরা বাড়াবাড়ি শুরু করেছেন। দুই বোন শাকিল হত্যাকাণ্ডে জড়িত জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জিতু ও তার সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জিতু ইসলামের নেতৃত্বে অটোরিকশাচালক শাকিল আহম্মেদকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা জানাজানি হলে জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়; কিন্তু হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
পরে পুলিশ শাকিলের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যায় জড়িত জিতু, তার দুই সহযোগী মতি ও বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে বগুড়া জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক জিতু ইসলামকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সবপর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
দলের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ না রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জিতু ইসলামের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ ও তার অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জোবায়েদ খান জানান, অটোরিকশাচালক শাকিল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার স্ত্রী মালেকা খাতুন ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি বহিষ্কৃত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জিতু ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তাদের রোববার দুপুরে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।