চলনবিলের কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিলঘেঁষা ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি, সরিষাবাড়ি ও পাড়িল গ্রাম মূলত সরিষা উৎপাদনে পরিচিত। এবারও কৃষকরা সরিষা তোলার পর জমিতে ব্রি ধান-২৯ জাতের আবাদ করেন।
সম্প্রতি কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও আগাম বন্যায় এসব জমিতে পানি চলে এসেছে। এতে ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। প্রায় ২৫০ কৃষকের স্বপ্নের ফসল এখনো পানির নিচে।
দেখা গেছে, চলনবিলের ওইসব এলাকার কৃষকরা তাদের জমির কিছু ধান বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে নৌকাযোগে কেউবা ভেলায়, কিছু এলাকায় এখনো নৌকা ছাড়া চলাচলের উপায় নেই।
যেসব কৃষক নিজের ঘরেই ফসল সংরক্ষণ করতেন, তারাও ক্ষতির মুখে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামানো হয়েছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। কম্বাইন হারভেস্টর ও থ্রেসার মেশিনের মাধ্যমে ধান কর্তন ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ জানান, টানা বৃষ্টি ও আগাম বন্যার কারণে জমিতে পানি ওঠায় ধান কাটার সমস্যা হয়েছিল। তবে আমরা দ্রুত মাঠে কম্বাইন হারভেস্টর নামানোর ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের ক্ষতি না হয়, সে জন্য স্বল্পমেয়াদি ধান জাত চাষের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে তাড়াশ উপজেলার হামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা সরিষা আবাদ করার পর ব্রি-২৯ জাতের ধান লাগাই। এ কারণে ধান পাকতে সময় লাগে। এবার টানা বৃষ্টি আর আগাম বন্যার কারণে ফসলি জমি ডুবে যাচ্ছে।
১০ বিঘার মধ্যে ৫ বিঘার ধান কাটতে পেরেছি। বাকি জমির ধান এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। বিঘা প্রতি সাত-আট হাজার টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলন ভালো হলেও এবার লোকসান গুনতে হবে।
আরেক কৃষক আশরাফ বলেন, ঋণ করে চাষ করেছিলাম। কিন্তু ফসল কাটার আগেই সব পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন তা কাটতেও পারছি না। আমার সব শেষ হয়ে গেল। পরিবার নিয়ে সারা বছর কীভাবে চলবো, সেটাই এখন ভাবছি।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চলনবিল অঞ্চলে ৯৩ ভাগ বোরো ধান ইতোমধ্যে কাটা শেষ হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়া ও হঠাৎ পানি প্রবেশ করায় বিলের নিম্নাঞ্চলের নাবি জাতের ধান কাটা নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হবে। তিনি আরও জানান, পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।
কৃষকদের দেয়া তথ্যমতে, চলনবিলের তাড়াশ ও শাহজাদপুর এলাকায় প্রায় ১১৩ হেক্টর ফসল পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া নাটোরের সিংড়া ও গুরুদাসপুর এলাকাতেও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।