আবারও করোনার হানা: সতর্কতায়ই রক্ষা

সম্পাদকীয়
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘ দুই বছরের মহামারি মোকাবিলার পর যখন করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মনে হচ্ছিল, তখন আবারও তার নতুন হুমকি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণের হার আবারও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সীমিত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষাতেই উচ্চ হারে সংক্রমণ ধরা পড়ছে-যা এই মুহূর্তে আগাম সতর্কতা অবলম্বনের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে যে বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা কোনোভাবেই অবহেলা করার মতো নয়। একদিনে ১০১টি নমুনার মধ্যে ১৩টিতে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার অর্থ, সংক্রমণের হার প্রায় ১৩ শতাংশের কাছাকাছি-যা স্পষ্টতই ঝুঁকিপূর্ণ।
এর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ যথাযথ হলেও, আরও বিস্তৃত ও বহুমুখী প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সীমিত পরিসরে হলেও আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাদের উপসর্গ রয়েছে, তারা এই পরীক্ষার আওতায় আসবেন। তবে এটি শুধু একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ।
যদি সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়, তাহলে পরীক্ষার পরিধি বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়বে। একইসঙ্গে, স্বাস্থ্যসেবা খাতের অবকাঠামো প্রস্তুত রাখা-যেমন, অক্সিজেন, আইসিইউ সুবিধা, ওষুধ এবং সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করা-একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া সাত দফা পরামর্শ যথাযথ ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিসম্পন্ন। তবে এসব নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়নে প্রয়োজন সচেতনতা এবং কঠোর সামাজিক অনুশাসন।
মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং উপসর্গ দেখা দিলে ঘরে থাকা-এই অভ্যাসগুলোই পারে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে। করোনার সঙ্গে আমাদের এই ‘সহাবস্থান’ নতুন কিছু নয়। তবে একে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মহামারির শুরুর সময়ের মতো আতঙ্কে নয়, বরং এখন প্রয়োজন তথ্যভিত্তিক সচেতনতা ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। একটি বিষয় স্পষ্ট-এই ভাইরাস হয়তো পুরোপুরি নির্মূল হবে না, তবে আমরা চাইলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি।
সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে এ সঙ্কট মোকাবেলায়। আগাম সতর্কতাই পারে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিপর্যয় ঠেকাতে। অতএব, এ মুহূর্তে উদাসীনতা নয়, প্রয়োজন যৌক্তিক শৃঙ্খলা এবং সম্মিলিত দায়িত্ববোধ।