ঢাকা | জুন ১৩, ২০২৫ - ১০:৩৮ অপরাহ্ন

ডায়রিয়া ও তাপপ্রবাহ: মান্দা ও দুর্গাপুরে শয্যা ছাপিয়ে মেঝে-বারান্দায় রোগী আর রোগী

  • আপডেট: Friday, June 13, 2025 - 12:31 am

দুর্গাপুর মান্দা প্রতিনিধি: রাজশাহীর দুর্গাপুরে এবং নওগাঁর মান্দায় ঈদের পর হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়া ও পেটের যন্ত্রণায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোগীর চাপ বেশি থাকায় শয্যায় জায়গা না থাকায় স্থানীয় হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।

আক্রান্তদের মধ্যে মধ্যে ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া জনিত রোগীর সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও অতিরিক্ত গরমের কারণেও বাড়ছে রোগীর চাপ। দুর্গাপুরে রোগীর এমন চাপ থাকলেও ৫০ শয্যা হাসপাতালের বর্হিবিভাগে মাত্র দুইজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঈদের পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন রোগী ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া জনিত রোগে ভর্তি হয়েছেন। অতিরিক্ত রোগীর চাপ হওয়ায় রোগীরা হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জরুরি ও বর্হিবিভাগে ১৫-২০ জন ডায়রিয়ায় ও পেটের পীড়া জনতি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত চার দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে ৭০ জন ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া জনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও মধ্যে বয়সী লোক বেশি রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর চাপ থাকলেও চিকিৎসক নেই। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে বর্হিবিভাগে মাত্র দুই জন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। চক্ষু, মেডিসিন, শিশু, হাড়জোড় এমনি কী টিএইচওর কক্ষ বন্ধ পাওয়া গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শিশু সহ ১০ জন ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া জনিত রোগে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে ঈদের পর থেকে প্রায় ৭০ জন শিশু নারী পুরুষ ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালে গত বুধবার রাত থেকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন সাড়ে ৩ বছর বয়সী সামিউল ইসলাম। কথা হয় তার মা মৌসুমি আক্তারের সঙ্গে। মৌসুম বলেন, প্রচন্ড গরমে ছেলেটি হাঁসফাঁস করছিল। তারপর শুরু হয় বমন। এখন পাতলা পায়খানা। রাতেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসা চলছে। পৌর এলাকার শালঘরিয়া গ্রামের ভ্যানচালক নুরুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তিন দিন আগ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন সুস্থ।

রিলিজ দিয়েছে। বাড়ি চলে যাব। পৌর এলাকার শাকির উদ্দিন বলেন, প্রচন্ড পেট ব্যথা নিয়ে বুধবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হোন। এরপর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। শয্যায় জায়গা না হওয়া বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উজানখলসী গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, মাংস খাওয়া ও প্রচণ্ড গরমে পেটের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঈদের পর দিন থেকে ভর্তি আছি। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। চিকিৎসক বলছে আরও সময় লাগবে।

এদিকে হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন নার্স, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। তাঁরা জানান, ঈদের পর ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে। কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স নাসিমা বেগম বলেন, গরম ও আবহাওয়া জনিত কারণে হাসপাতালে পেটের পীড়া ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেশি। জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রুহুল আমিন বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

ঈদের পর প্রচণ্ড গরম খাদ্যঅভ্যাসের কারণে ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া জনিত রোগ দেখা দিয়েছে। অনেকে ভর্তি হয়ে সুস্থ বাড়ি ফিরছেন ও কিছু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। রুহুল আমিন বলেন, একটু সচেতন হলেই ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এজন্য এ সময় বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

এদিকে, গত কয়েকদিনের একটানা তাপপ্রবাহের কারণে নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ডায়রিয়া ও গরমজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত পাঁচ দিনে অন্তত ২৩৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।  এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৮৫ জন। আর প্রচণ্ড গরমের কারণে পানি শূন্যতা, পেট ব্যথা, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ১৫০ জন।

৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৭ জন। ফলে বেডের অভাবে অনেক রোগীকে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এসব স্থানে বিদ্যুতের সুবিধা না থাকায় গরমে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। গত বুধবার সন্ধ্যায় পিরপালি বাজার থেকে পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন কুরসিয়া বিবি (৬০)। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাকে বারান্দায় রাখা হয়েছে।

বিদ্যুৎ নেই, ফ্যানও নেই। গরমে আর পেট ব্যথায় একেবারে নাকাল অবস্থা। একটু ভালো জায়গা আর চিকিৎসার ঠিকঠাক ব্যবস্থা চাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজনের দাবি, দ্রুত হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ানো, বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তাসনিম হুসাইন আরিফ বলেন, কোরবানির দিন থেকে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে হঠাৎ করেই রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। জনবল সঙ্কটে আমরা চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মাত্র চারজন চিকিৎসক নিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও আবাসিক চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নিতে হচ্ছে। হঠাৎ রোগীর চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বেড সংকুলান সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেক রোগীকে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। রোগীর চাপ এ রকম থাকলে আমাদের আরও সমস্যায় পড়তে হতে পারে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS