আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান, নিহত ২৪৬

সোনালী ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহমেদাবাদে বৃহস্পতিবার লন্ডনগামী একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন বলে জানিয়েছে দেশটির বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে রমেশ নামে এক যাত্রী অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে। ফলে বিমানের ২৪১ যাত্রী ও কলেজের ছাত্রাবাসের ৫ শিক্ষার্থীসহ মোট ২৪৬ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
আহমেদাবাদ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১ আহমেদাবাদের বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনাকে ‘মর্মান্তিক দুর্ঘটনা’ বলে বলে উল্লেখ করেছে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। ভারতের বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু কিঞ্জারাপু এ দুর্ঘটনায় ‘স্তম্ভিত ও মর্মাহত’ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন। এএফপি’র একজন সাংবাদিক জানান, আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের ওপর দিয়ে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি শহরের আবাসিক মেঘানি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী ফ্লাইট এআই ১৭১ ছিল।
বিধ্বস্ত বিমানটি আহমেদাবাদের বি জে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ে। দুপুরের খাবারের সময় ছাত্রাবাসের ক্যানটিনে থাকা অবস্থায় পাঁচজন মেডিকেল শিক্ষার্থী নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও অনেক শিক্ষার্থী।
দুর্ঘটনার পর প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, হোস্টেলের ক্যানটিনে খাবারের থালা-গ্লাস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং উড়োজাহাজের কিছু ধ্বংসাবশেষ দেয়াল ভেদ করে ক্যানটিনের ভেতরে ঢ়ুকে পড়েছে। ফ্লাইট রাডারের তথ্য অনুযায়ী, উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের মাত্র কয়েক সেকেন্ড পর থেকেই সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
তখন সেটি মাত্র ৬২৫ ফুট ওপরে ছিল। এ সময় পাইলট ‘মে ডে’ বার্তা পাঠান। এরপর আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। বিমানের প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল, যিনি ৮,২০০ ঘন্টার বেশি উড্ডয়নের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। সহকারী পাইলট ক্লাইভ কুন্ডারের ছিল ১,১০০ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উড়োজাহাজটি দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে হোস্টেলে আছড়ে পড়ে। যেহেতু এটি লন্ডনের মতো দূরবর্তী গন্তব্যে যাচ্ছিল, তাই বিমানে পূর্ণ জ্বালানি ভর্তি ছিল। বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি একটি বিশাল আগুনের গোলায় বিস্ফোরিত হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, বিমানটি নিচু দিয়ে উড়ছিল এবং উচ্চতা অর্জনের চেষ্টা করছিল। একপর্যায়ে দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে সেটি আছড়ে পড়ে।
ভারতের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত বিমানটিতে ২৩২ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্ঘটনার পর এক্স-পোস্টে এয়ার ইন্ডিয়া নিশ্চিত করেছে, ‘বোয়িং ৭৮৭-৮’ বিমানটিতে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ ও ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক ছিলেন।
ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন জানায়, বিমানটি একটি ‘মেডে’ (জরুরি সহায়তা) সংকেত পাঠানোর পরপরই বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি বিমানবন্দরের সীমানার বাইরে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। আশি লাখ জনসংখ্যার শহর আহমেদাবাদ ভারতের গুজরাট রাজ্যের প্রধান শহর। এ শহরের ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত।
বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবহারওয়াল ও সহকারী পাইলট ছিলেন ক্লাইভ কুন্ডার। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের পরপরই বিমানে বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়, যে কারণে দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
বিমান পরিবহণমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু কিঞ্জারাপু বলেন, বিমান চলাচল ও জরুরি সেবা সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে দ্রুত ও সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। চিকিৎসা সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিমানে থাকা সকল আরোহী ও তাদের পরিবারের প্রতি আমার প্রার্থনা ও সহানুভূতি রইল। এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া চেয়ারম্যান নাটরাজন চন্দ্রশেখরন এক বিবৃতিতে বলেন, গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি যে,, এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১ আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকগামী বিমানটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার সকল আরোহী ও তাদের স্বজনদের প্রতি আমরা আমাদের গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাচ্ছি। এয়ার ইন্ডিয়া চেয়ারম্যান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য একটি জরুরি সহায়তা কেন্দ্র ও তথ্য সেবা দল গঠন করা হয়েছে।
ফ্লাইট সেফটি বিশেষজ্ঞ মার্কো চ্যান জানিয়েছেন, উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় আবহাওয়া স্থিতিশীল ও আকাশ পরিষ্কার ছিল। উল্লেখ্য, এর আগে ভারতে একাধিক মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৬ সালে দিল্লির আকাশে দুটি জেট বিমানের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রায় ৩৫০ জন নিহত হন। ২০১০ সালে, দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের ম্যাঙ্গালোরে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের এক বিমান দুর্ঘটনায় ১৬৬ জন আরোহীর মধ্যে ১৫৮ জন প্রাণ হারান।
এর আগে, ১৯৮৫ সালের জুন মাসে মন্ট্রিয়াল থেকে লন্ডনগামী একটি এয়ার ইন্ডিয়া বোয়িং ৭৪৭ বিমান আয়ারল্যান্ড উপকূলে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩২৯ জন আরোহীর সবাই নিহত হন।