ঢাকা | জুন ১৫, ২০২৫ - ৩:২৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

বিয়ে নয়, মাদকের টাকার জন্য খুন হয়েছেন সেই ইমাম

  • আপডেট: Thursday, June 12, 2025 - 11:43 pm

পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার ভাঙ্গুড়ায় চাঞ্চল্যকর নৈশপ্রহরী কাম-ইমাম আব্দুল গণি (৬০) হত্যার ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে। বিয়ে না পড়ানোর জেরে নয় বরং মাদকের টাকার লোভে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন অভিযুক্তরা। গত বুধবার এ ঘটনায় জড়িত  হাবিব (১৪) ও আহাম্মাদ আলীকে (১৬) গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন বিকালে পাবনার আমলি আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে নিজেদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

গ্রেফতাররা হলো- ভাঙ্গুড়া উপজেলার বৃদ্ধমরিচ গ্রামের জেলহক প্রামাণিকের ছেলে হাবিব এবং একই উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের আছমত আলীর ছেলে আহাম্মাদ আলী। নিহত আব্দুল গণি ভাঙ্গুড়া সিকেবি আলিম মাদ্রাসার নৈশপ্রহরীর পাশাপাশি ইমামতি করতেন। এছাড়াও এলাকায় বিয়ে পড়ানোর কাজ করতেন তিনি। গত ৯ জুন রাতে ওই মাদ্রাসার কক্ষেই আব্দুল গণিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

পুলিশ জানায়, কিশোর হাবিব ভুক্তভোগী আব্দুল গণিকে নানা বলে ডাকত। সুসম্পর্কের কারণে মাঝে মধ্যে মাদ্রাসায় আব্দুল গণির সঙ্গে রাতযাপন করত। গণি তার চাকরির বেতনসহ অন্য গচ্ছিত টাকা-পয়সা নিজের কাছে রাখতেন এবং বিষয়টি হাবিবের জানা ছিল।

হাবিব এ বিষয়ে কিশোর আহম্মাদ আলীর সঙ্গে আলোচনা করে এবং কিভাবে গণির টাকা নেওয়া যায় সেই পরিকল্পনা করে। এর ধারাবাহিকতায় তারা (হাবিব ও আহাম্মাদ) দুজনে মিলে ৯ জুন মধ্যরাতে চন্ডিপুর ফুটবল মাঠে বসে ডেন্ডির (গাম) মাধ্যমে নেশা করে এবং গণির গচ্ছিত টাকা নেওয়ার জন্য তাকে (ভুক্তভোগীকে) হত্যার পরিকল্পনা করে।

মূলত তারা নেশাজাতীয় দ্রব্য কেনার জন্য টাকার লোভে এ কাজ করে। পরিকল্পনামাফিক তারা ওই রাতে অনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে মাদ্রাসায় আব্দুল গণি থাকার কক্ষে যায় এবং হাবিব কৌশল করে ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোনে ওয়াজ দেখতে থাকে।

একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে আহাম্মাদ আলী ওই কক্ষের ভেতরে থাকা ছেনি দিয়ে গণির মাথায় ও বাম পাশের চোয়ালে আঘাত করে। পরে হাবিব ওই কক্ষে থাকা দায়ের উলটো পিঠ দিয়ে গণির মাথায় কয়েকটি আঘাতে জখম করে। এতে গণি অচেতন হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে তারা মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

পরে হাবিব বিষয়টি নিয়ে গণির ছেলে আব্দুল বারিককে মোবাইল ফোনে জানায়, তার বাবাকে কে বা কারা কুপিয়েছে। খবর শুনে বারিক স্থানীয়দের সঙ্গে ঘটনাস্থলে যান এবং এ সময় হাবিবও তাদের সঙ্গে ছিল। আহাম্মাদ আলী তখন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় গণিকে উদ্ধার করে প্রথমে সিরাজগঞ্জ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে ১০ জুন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন গণির মৃত্যু হয়।   এ ঘটনায় বারিক বাদী হয়ে ভাঙ্গুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে চাটমোহর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরজুমা আকতার ও ভাঙ্গুড়া থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাবিব এবং আহাম্মাদ আলীকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ও ছেনি জব্দ করা হয়।

প্রসঙ্গত জনৈক শাহাদত আলীর পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে বিয়ে না পড়ানোর জেরে আব্দুল গণিকে হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায় এবং শাহাদতকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS