রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ, আড়াই ঘণ্টা পর সারাদেশের সাথে ট্রেন চলাচল শুরু

ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে
চারঘাট প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী রেলস্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে স্থানীয় লোকজন। এতে ঈদের ফিরতি যাত্রায় সারাদেশের সাথে রাজশাহীর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আড়াই ঘণ্টা ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর ৮ টা ৪৫ মিনিটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নন্দনগাছী স্টেশনে পৌঁছানের আগেই লাল কাপড় টাঙিয়ে খুলনাগামী সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস থামিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারী। তারা স্টেশন চত্বর অবস্থান নিয়ে স্টেশন সংস্কার ও আন্তঃনগর ট্রেন থামানোর দাবি-সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন তুলে ধরেন। এ সময় তারা “আমাদের দাবি, আমাদের অধিকার” ও নন্দনগাছী “স্টেশন এইবার হবে সংস্কার” স্লোগান দিচ্ছিলেন।
এদিকে সকাল সাড়ে ছয়টায় নন্দনগাছী স্টেশনে সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস আটকে পরার পর রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস ও মেইল ট্রেন পথিমধ্যে আটকা পড়ে। আড়াই ঘণ্টা পর ট্রেন চালু হলেও শিডিউল বিপর্যয় শুরু হয়েছে।
ঘটনাস্থলে আটকা পড়া সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেসের যাত্রী নোমানুর রহমান বলেন, রাজশাহীতে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে পরিবার নিয়ে যশোরে নিজ বাড়িতে ফিরছি। তীব্র গরমের মধ্যে আন্দোলনের কারণে ট্রেন আটকা পড়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরা তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছে। সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে আন্দোলন না করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।
আন্দোলনকারীর দাবির মধ্যে আছে-সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও ঢালার চর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি এবং নন্দনগাছী স্টেশনের সংস্কার।
জানা গেছে, ১৯২৯ সালে চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়নে নন্দনগাছী স্টেশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শতবর্ষী স্টেশনটি দিয়ে প্রতিদিন ১৬টি ট্রেন যাতায়াত করলেও কোনো আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রা বিরতি দেয় না। শুধুমাত্র দুইটি লোকাল ট্রেন থামে। নিয়ম অনুযায়ী এই স্টেশনে স্টেশনমাস্টার, টিকিট মাস্টার, পোর্টারম্যান, পয়েন্টসম্যান, গেটম্যানসহ জনবল ছিল ১২ জন।
বর্তমানে শুধু পোর্টারম্যান পদে একজন কর্মরত আছেন। গত এক যুগ ধরে স্টেশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর আগে, গেল ১ মে একই দাবিতে ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করেছিল রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া উপজেলার হাজারও মানুষ।
এ সময় রাজশাহী থেকে চিলাহাটিগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও লোকাল মেল ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এতে প্রায় চার ঘণ্টা সারাদেশের সাথে রাজশাহীর রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। পরে রেল কতৃপক্ষ তাদের দাবি ১ জুনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন বন্ধ করেছিল তারা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরেও দাবি মেনে না নেয়ায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে আবারো রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারী।
আন্দোলনের সমন্বয়কারী তারিকুল ইসলাম জনি বলেন, তিন উপজেলার ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র স্টেশনটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এখন ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে স্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। বিগত সরকারের সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি।
গতদিন আন্দোলনের পর রেল কর্তৃপক্ষ একই ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি। এবারও আড়াই ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ দায়িত্ব নিয়ে ট্রেন চালু করেছেন। জিআরপি ইশ্বরদী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, অবরোধের কথা শুনে আমরা নন্দনগাছী এসেছি।
স্থানীয়রা বিভিন্ন দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেছে। এখন ঈদের ফিরতি যাত্রা চলছে এজন্য ট্রেনে অনেক চাপ। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক লিয়াকত শরীফ খান বলেন, ঈদের ছুটি শেষে মানুষ কর্মস্থলে ফিরছে এ সময় অবরোধ করে রেল যোগাযোগ বন্ধ করা হলে তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।
আমরা রেল সেবা নিশ্চিত করতে ঈদের ছুটি না গিয়ে কাজ করছি। কিন্তু উনারা এখন আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। বরং এখন আন্দোলন না করে ঈদের ছুটির পর অফিস খুললে সেখানে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছি।