রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল: সড়কে প্রাণ গেল সাত জনের

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মোট সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। চাঁপাই ব্যুরো জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় আলাদা দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। গত শনিবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকার নয়াগোলা-সাতনইল ও শিবগঞ্জ উপজেলা চককীর্তিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো- শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের বিমর্ষী গ্রামের মৃত কান্তর ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন (৮৫) ও রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পাকড়ী দিঘী পাড়ার ফারুক হোসেনের ছেলে হৃদয় আলী (২০)। সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মতিউর রহমান জানান, শনিবার দিবাগত রাতে মোটরসাইকেল যোগে আমনুরা থেকে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে শহরের দিকে আসছিল হৃদয়। সাতনইল এলাকায় পৌঁছলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে।
এতে ওই যুবককে গুরুতর অবস্থায় জেলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা রাত ১টার দিকে হৃদয়কে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি বিমর্ষী এলাকায় নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল মোয়াজ্জেমকে ধাক্কা দিলে সে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।
পরের দিন রোববার সকাল ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোয়াজ্জেম মারা যায়। দুটি দুর্ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান ওসি।
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার চাটমোহরে মাইক্রোবাসের চাকায় পিষ্ট জহুরুল ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে উপজেলার বোয়াইলমারী গোনস্থান এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জহুরুল উপজেলার হরিপুর কুঠিপাড়া গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে।
নিহতের স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার ভোরে ব্যাটারিচালিত ভ্যানযোগে ছাইকোলা হাটে আম বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন জহুরুল। ভ্যানটি বোয়াইলমারী গোনস্থান এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্যাটারিচালিত যানটিতে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তায় ছিটকে পড়ে জহুরুল।
এ সময় মাইক্রোবাসটির চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। চাটমোহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন কুমার সরকার বলেন, নিহতের পরিবারের লোকজন থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, নাটোরের সিংড়ায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে রমজান আলী মোল্লা (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের সিংড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পেশায় রিকশাচালক নিহত রমজান সিংড়া পৌর শহরের পাটকোল মহল্লার মৃত খাদেম মোল্লার ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে সিংড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান করছিলেন রমজান। একপর্যায়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছিলেন তিনি। এ সময় নাটোরগামী একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। সিংড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, ঈদের নামাজে অংশ নিতে বাবা-ছেলে বের হন বাড়ি থেকে। পথিমধ্যে ঘটল বিপত্তি। অজ্ঞাত যানের চাপায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারালেন বাবা ও ছেলে। গত শনিবার সকালে বগুড়ার শাহাজানপুরের নয়মাইল এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, উপজেলার বামুনিয়া মন্ডলপাড়ার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে নাবিল পরিবহণের চালক চাঁন মিয়া (৩৫) ও তার চার বছরের ছেলে আবদুল্লাহ। হাইওয়ে পুলিশ শেরপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আজিজুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বামুনিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করতে চাঁন মিয়া শনিবার সকাল ৭টার দিকে ছেলে আবদুল্লাহকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। তারা নয়মাইল এলাকায় লাফিয়ে মহাসড়কের ডিভাইডারের ওপর দিয়ে পার হন। এরপর মহাসড়ক পার হওয়ার চেষ্টা করলে অজ্ঞাত যান তাদের দুজনকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
এতে ঘটনাস্থলেই বাবা ও ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ খবর বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনরা আহাজারি করতে থাকেন। তাদের মৃত্যুতে শুধু ওই পরিবারে নয়, পুরো গ্রামের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ইন্সপেক্টর আজিজুল ইসলাম বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ দুটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক যান ও এর চালককে শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে থানায় পরিবহণ আইনে মামলা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ট্রাকের পেছনে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় দুজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হন আরও দুজন।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মশিপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া গ্রামের কেসমত প্রমাণিকের ছেলে রউফ আলী (৫০) ও একই উপজেলার দাসপাড়া গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী তৃষা খাতুন (২৮)। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ জানান, বেড়া থেকে সিএনজিটি যাত্রী নিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু মশিপুর এলাকায় পৌঁছালে সামনে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ ব্রেক করলে সিএনজি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়।
পরে স্থানীয়রা আহত অপর দুই যাত্রীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই ট্রাক ও সিএনজি চালক পালিয়ে গেছেন। তবে নিহত পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ দুটি হস্তান্তর করা হয়েছে।