ঢাকা | জুন ১২, ২০২৫ - ১২:৫২ অপরাহ্ন

দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে বাড়ছে উদ্বেগ

  • আপডেট: Wednesday, June 11, 2025 - 12:53 am

নতুন আক্রান্ত ১৩, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন নির্দেশনা

সোনালী ডেস্ক: দেশে ফের চোখ রাঙাতে শুরু করেছে মহামারি করোনাভাইরাস। নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনা প্রতিরোধে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য পাঁচ দফা নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সম্প্রতি ওমিক্রনের কয়েকটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১ এর সংক্রমণ বিভিন্ন দেশে দ্রুত হারে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্টগুলো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভারতসহ আশপাশের কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে।

সেই সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া এসব দেশে ভ্রমণ না করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যেসব বিদেশি যাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন, তাদেরও স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে বিদেশ ফেরত অনেক যাত্রী বিমানবন্দরে ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, ঝুঁকি কমাতে কর্তৃপক্ষের আরও সক্রিয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে বেনাপোল স্থলবন্দরেও একই সতর্কতা দেখা গেছে। ইমিগ্রেশনে আগত যাত্রীদের করোনা উপসর্গ রয়েছে কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিশ্বব্যাপী একসময় তাণ্ডব চালানো করোনা ভাইরাস নতুন রূপে আবারও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে—এই আশঙ্কা থেকেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

নতুন শনাক্ত ১৩: দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০ জনে। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তদের প্রত্যেকেই ঢাকা মহানগরী এলাকার বাসিন্দা। এর আগে ৯ জুন ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন দুইজন। এর ফলে এ সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন নির্দেশনা: করোনা প্রতিরোধে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য পাঁচ দফা নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

প্রধান নির্দেশনাসমূহের মধ্যে রয়েছে-সাবান ও পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গণপরিবহন ও জনসমাগমস্থলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, অপরিষ্কার হাতে মুখমণ্ডল স্পর্শ না করার জন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সচেতন করা এবং হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা।

গত সোমবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, করোনার নতুন ধরনের বিস্তার রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য বিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় থার্মাল স্ক্যানার বা ডিজিটাল থার্মোমিটারের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া করোনার লক্ষণ দেখা দিলে ঘরে থাকা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। জরুরি প্রয়োজনে আইইডিসিআরের হটলাইন ০১৪০১-১৯৬২৯৩ এ যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সম্প্রতি ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে নতুন ধরনের সংক্রমণ বাড়ায় বাংলাদেশেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং জোরদার করেছে।

হিলি চেকপোস্টে সতর্কতা জারি: ভারতের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে মেডিকেল টিম, করা হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, শুরু হয়েছে মাস্কের ব্যবহার।

মঙ্গলবার দুপুরে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বসানো হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম। মেডিকেল টিমের দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের করোনা ভাইরাসের উপসর্গ আছে কিনা তা হেল্থ স্ক্যানারের মাধ্যমে পরীক্ষা করছেন।

ইমিগ্রেশনে সকলেই মাস্ক ব্যবহার করছে। এছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত পাসপোর্ট ধারী যাত্রী এবং কাস্টমস ও সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরাও মাস্ক ব্যবহার করছেন। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত ওসি আবু তালেব বলেন, করোনার বিষয়ে আমরা হিলি ইমিগ্রেশন সচেতন আছি। পাসপোর্ট ধারী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার জন্য মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে।

হেলথ স্ক্যানারও বসানো হয়েছে। সকল যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সবার মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। হিলি কাস্টমস সুপার শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কাস্টমস সজাগ রয়েছি।

অফিসে সবাই মাস্ক ব্যবহার করছি। এছাড়াও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের মাস্ক ছাড়া অফিসে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হুমায়ুন কবির বলেন, ভারতে জেনেটিক সিকোয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, দেশটির কিছু স্থানে ওমিক্রনের নতুন এক ধরণ বা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে।

দেশে এ ধরণটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে একটি মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সতর্কতার জন্য ভারত ফেরত সকল যাত্রীকে আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। যাত্রীদের স্ক্যানারের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা হচ্ছে। এছাড়াও যাত্রীদের করোনার বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

যদি কারও শরীরে করোনা বা ওমিক্রনের উপসর্গ পাওয়া যায় তাহলে যেন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে রাখা হয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে করোনার যে নতুন উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে, সেটি তেমন মারাত্মক নয়। প্রথমে জ্বর-সর্দি কাশি হচ্ছে। নিয়মমাফিক চললে এটা প্রতিহত করা সম্ভব। এটা নিয়ে তেমন আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS