সাগরে ডুবে মারা গেছেন ছেলে ও নাতি, জানেন না বৃদ্ধ বাবা

স্টাফ রিপোর্টার: ছেলে ও নাতি কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে সাগরে ডুবে মারা গেছেন। তাঁদের লাশ নিয়ে আসা হচ্ছে বাড়িতে। তবে বাবা আবুল কালাম মন্টু (৮০) শুধু জানেন, পানিতে ডুবে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন ছেলে ও নাতি।
তাঁরা বাড়ি ফিরছেন। আবুল কালাম অসুস্থ, এ জন্য তাঁকে এখনো খবরটি জানানো হয়নি। কীভাবে এই দুঃসংবাদ বৃদ্ধ বাবাকে জানাবেন, তাও বুঝতে পারছেন না স্বজনেরা। আপাতত তাঁর কাছ থেকে খবরটি আড়াল করতে কেউ এলেই জানিয়ে দেয়া হচ্ছে ছেলে ও নাতির মৃত্যুর খবর এখনো তাঁকে জানানো হয়নি।
মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান পূর্বপাড়ায় বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। স্বজনেরা আবুল কালামের কাছে যাচ্ছেন, সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। আবুল কালামকে তখন খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।
গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে কক্সবাজারের কলাতলী সৈকতের সায়মন বিচ পয়েন্টে সাগরের পানিতে ডুবে মারা যান আবুল কালামের ছেলে শাহানুর আলম (৫৩) ও নাতি ইফতেশাম আলম সিফাত (২০)।
শাহানুর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) রাজশাহীর মোহনপুর জোন কার্যালয়ের সহকারী হিসাবরক্ষক। তাঁর ছেলে সিফাত এবার অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন।
শাহানুরের ভাই মনসুর আলম একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ভিডিও এডিটর। তিনি জানান, তাঁর বাবা আবুল কালাম কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত। সাতটি কেমো দেয়া হয়েছে।
শরীরে আরও নানা জটিলতা আছে। এরই মধ্যে গত বছরের ১৫ আগস্ট তাঁদের মা আলিয়া খাতুন মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর আরও ভেঙে পড়েছেন বাবা।
তাই ছেলে ও নাতির মৃত্যুর খবর জানাতে তাঁরা সাহস পাচ্ছেন না। বাড়িতে দুটি লাশ আসছে। তাঁরা বাবাকে কীভাবে জানাবেন, সেটা নিয়েই ভাবছেন।
স্বজনেরা জানান, শাহানুরের স্ত্রী ইয়াসমিন আরা ঢাকায় থাকেন। সেখানে তিনি চাকরি করেন। শাহানুর-ইয়াসমিনের দুই ছেলে।
সিফাত বড়। ছোট ছেলে ইফতেখার আলম রাহাত (১৬) রাজশাহীর একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। স্ত্রী ঢাকায় থাকলেও দুই ছেলেকে নিয়ে রাজশাহীতে থাকতেন শাহানুর।
শাহানুরের ভাতিজা রাকিবুল আলম জানান, গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতেও দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন শাহানুর আলম। সেবার কয়েক দিন পর ফিরে এলেও এবার আর এলেন না। রাকিবুল জানান, ঈদের আগে গত ৪ জুন দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় স্ত্রীর কাছে যান শাহানুর। পরদিন তাঁরা কক্সবাজারে যান। বাসের টিকিট পেলে সোমবার সন্ধ্যায় তাঁদের ঢাকায় রওনা দেয়ার কথা ছিল। এর আগে দুপুরে তাঁরা সায়মন বিচ পয়েন্টে গোসল করতে যান। সেখানে বড় ছেলে সিফাতকে পানিতে ডুবে যেতে দেখে তাঁকে উদ্ধারে ঝাঁপ দেন বাবা শাহানুর আলম। কিন্তু তিনিও আর উঠে আসতে পারেননি। পরে লাইফগার্ডের সদস্যরা বাবা ও ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
রাকিবুল আলম আরও জানান, সোমবার সন্ধ্যায় শাহানুর ও সিফাতের লাশ নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা ছিল ইয়াসমিন আরা ও ইফতেখার আলম রাহাতের। কিন্তু সেদিন তাঁরা লাশ নিয়ে রওনা দিতে পারেননি। গতকাল বেলা আড়াইটায় তাঁরা লাশ নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ভোররাতে বাবা ও ছেলের লাশ আসার কথা। আজ বুধবার সকালে বাড়ির পাশেই মহিষবাথান কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে তাঁদের দাফন করা হবে।