ঢাকা | জুন ১২, ২০২৫ - ৮:৪০ পূর্বাহ্ন

রাষ্ট্রের মৌলিক চিহ্ন হচ্ছে নারীর নিরাপত্তা ও সম্মান

  • আপডেট: Tuesday, June 10, 2025 - 10:51 pm

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য আমাদের সমাজের এক গভীর ও বেদনাদায়ক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

চলতি বছরের মে মাসে দেশের ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা গেছে, মাত্র এক মাসে ১৮৪ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

এ সংখ্যা শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়; এটি আমাদের সমাজ, প্রশাসন এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য এক তীব্র সতর্কসংকেত। এই ১৮৪ জনের মধ্যে ৭৫ জন কন্যা এবং ১০৯ জন নারী।

ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩১ জন কন্যাসহ ৪৫ জন। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণের চেষ্টাসহ বিভিন্ন ভয়াবহ মাত্রা যুক্ত আছে।

এছাড়াও যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্ত করা, পারিবারিক সহিংসতা, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যা, অগ্নিদগ্ধ, আত্মহত্যা এবং অপহরণের মতো বহু ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন নারী ও কন্যারা। এই পরিসংখ্যান কেবল পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি – অর্থাৎ, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

কারণ অনেক ভুক্তভোগীই নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক লজ্জা বা বিচারহীনতার ভয়ে মুখ খোলেন না। সমস্যাটি যে কেবল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা নয়।

বরং এর গভীরে রয়েছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, সাংস্কৃতিক পশ্চাদপদতা, নারীর প্রতি অসম্মান এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি। শিশুদের ক্ষেত্রেও নির্যাতনের প্রকৃতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সরকার ও প্রশাসনের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। বিচারহীনতা, বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়া এবং ভিকটিমকে বারবার হেনস্তা করার সামাজিক রীতিই অনেক সময় অপরাধীদের উৎসাহিত করে তোলে।

এই বাস্তবতা পরিবর্তনের জন্য চাই সমন্বিত উদ্যোগ। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচার বিভাগ-সবক্ষেত্রে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আন্তরিকতা প্রয়োজন।

পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটানো, নারী ও শিশু সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নে কঠোরতা এবং নির্যাতনের শিকারদের জন্য সহজ ও মানবিক সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য। একটি সভ্য ও মানবিক রাষ্ট্রের মৌলিক চিহ্ন হচ্ছে নারীর নিরাপত্তা ও সম্মান।

এই পরিসংখ্যান যেন কেবল সংখ্যায় সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং আমাদের মননে, বিবেকের গভীরে নাড়া দিয়ে জাগিয়ে তোলে প্রতিরোধের সচেতনতা-এই হোক আজকের প্রতিশ্রুতি।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS