ঢাকা | জুন ৬, ২০২৫ - ৩:৪৩ অপরাহ্ন

তানোরে মুখরিত কামারপট্টি, চারঘাটে মাংস কাটতে খাইট্টার কদর

  • আপডেট: Thursday, June 5, 2025 - 1:23 am

আসন্ন কোরবানি ঈদ

সাঈদ সাজু মোজাম্মেল হক: রাজশাহীর তানোরে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে টুংটাং শব্দে মুখর বিভিন্ন কামারপাড়া ও গোল্লাপাড়া বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের কামারপট্টি।

বছরের অন্য সময় অনেকটা অলস কাটালেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকার পল্লীর কর্মকারসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও।

এলাকার কামাররা ছুরি, চাপাতি, দা, বটি, হাসুয়া, কুড়াল ইত্যাদি যন্ত্র তৈরি করছেন।  অন্যদিকে কোরবানির ঈদে মাংস কাটার অন্যতম অনুসঙ্গ হচ্ছে গাছের গুড়ি বা খাটিয়া। তাই ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় বেড়ে গেছে খাটিয়ার চাহিদা ও দাম।

জানা গেছে, মূলত: বছরে ঈদের আগে এই সময়টাতে কামারদের আয় ভালো হয়। ফলে, টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠে তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কামারপট্টি।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে তানোর সদরের গোল্লাপাড়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাত্র ২টি দোকানে কর্মকাররা তৈরি করছেন দা, হাসুয়া, ছুরি, চাকু, চাপলসহ লোহার বিভিন্ন যন্ত্র। কথা হয়, তানোর সদর গোল্লাপাড়া গ্রামের গোবিন্দ কর্মকারের ছেলে উজ্জল কর্মকারের সাথে তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে এখন আমি আর আমার ভাই গৌতম বাপ দাদার এই পেশা ধরে রেখেছি।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় আধুনিক সব যন্ত্রের কারণে গ্রামের অন্যরা চলে গেছেন অন্য পেশায়। তিনি বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ব্যবসা কম। পুরোনো গুলোই মানুষ ধার করাচ্ছেন বেশি, নতুনগুলো বিক্রি কম।

ঈদের দিন সকালে মুসলিম পরিবারে পশু কোরবানি, চামড়া ছাড়ানো, হাড় ও মাংস কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। কোরবানির কাজে ব্যবহৃত দা, ছুরি, চাপাতি সারা বছর তেমন ব্যবহার না হলেও ঈদের দিনে এসব যন্ত্রের ব্যবহার খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

তাই তো কোরবানিকে সামনে রেখে কামারপাড়া ভিড় বাড়তে শুরু করেছে মুসল্লিদের। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে তাল মিলিয়ে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে কামারপট্টিতে। ফলে, টুংটাং শব্দে মুখর কামারপট্টি।

সরেজমিনে উপজেলা বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি কামারের দোকানে দা, ছুরি, চাপাতি তৈরিতে দিনরাত কাজ করছেন কামাররা। লোহার টুকরা আগুনে পুড়িয়ে সেগুলো পিটিয়ে দা, ছেনিসহ বিভিন্ন লোহার সরঞ্জাম তৈরির টুং টাং শব্দে মুখর কামার পল্লী।

কামার পল্লীতে কেউ চুলায় ভাপি (বাতাস দেয়ার বিশেষ যন্ত্র) টানছে, কেউ লোহা পিটছে, কেউবা শান দিচ্ছে। অনেক কামার দোকানে ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে। কামার পাড়ার টুং টাং শব্দ সকাল থেকে শুরু করে চলে রাত অবধি। চাপাতি কিনতে আসে ক্রেতা মফিজুল ইসলাম বলেন, গত ঈদেও চাপাতি কিনেছিলাম।

কিন্তু একদিন ব্যবহারের পর সেগুলো কোথায় আছে খুঁজে পাচ্ছি না। একটি পেয়েছি তাও মাটিতে নষ্ট হয়ে গেছে।

তাই এ বছর আবারও চাপাতি কিনতে এসেছি। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছর দামও একটু বেশি। কামার সম্প্রদায়ের লোকজন বলেন, লোহার দাম বেশি, কয়লারও দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বছরের ১১ মাসই তেমন কাজ থাকে না।

কোরবানির সময় অতিরিক্ত শ্রমিক বেশি টাকা বেতনে কাজে লাগাতে হয়। তাই কোরবানির সময় অন্যান্য সময়ের তুলনায় লোহার সরঞ্জামের দাম একটু বেশি থাকে।

শান দেয়ার টাকা বেশি নেয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন তৈরি করেই তো সময় পাই না। পুরাতন জিনিসে শান দিব কখন? রাত জেগে কাজ করে শ্রমিকরা তাই এই মৌসুমে শান দেয়ার টাকা বেশি নেন সব কারিগররা।

এদিকে, গতকাল বুধবার চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার স’মিলে (কাঠ মিল) দেখা যায়, গাছের গুঁড়ি করাতে ফেলে ছোট-ছোট গোল আকৃতির টুকরা তৈরি করা হচ্ছে। এই গোল টুকরাগুলোই মাংস কাটার খাইট্টা হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

কোথাও কোথাও স’মিল থেকে খাইট্টাগুলো সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ভ্যানে করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এরপর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে।

আকার অনুযায়ী একেকটি খাইট্টা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা করে। ছোট-বড় নানা আকৃতির এসব খাইট্টা কিনছেন ক্রেতারা। খাইট্টা কিনতে আসা আফজাল হোসেন বলেন, আর মাত্র দুই দিন পর কোরবানির ঈদ।

হাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনলাম। ঈদের দিন নামাজ আদায় করার পর গরুটি কোরবানি দিবো। তবে বাড়িতে মাংস কাটার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই মাংস এবং হাড় কাটার জন্য ২০০ টাকা দিয়ে খাইট্টা কিনলাম।

খাইট্টা কিনতে আসা মাওলানা ক্বারি মুহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, আমার দুটি খাইট্টা লাগে। গতবারের চেয়ে এবার দিগুণ দাম চাচ্ছে। তারা বলছে এবার খরচ বেশি হয়েছে। কথা হয় ক্রেতা সোহেলের সাথে।

তিনি বলেন, প্রতি বছর ঈদুল আজহায় শখ করে একটি করে খাটিয়া কিনি। মাংস কাটার কাজে এটি ব্যবহার করি। খাইট্টা কেনাটাও ঈদের একটি আনন্দ। কাঠ ব্যবসায়ী মাসুদ জানান, তারা প্রতিবছর কোরবানির ঈদে বিভিন্ন স’মিল থেকে ছোট ছোট গুঁড়ি ক্রয় করেন।

এরপর সেগুলো মাংস কাটার উপযোগী করে নির্দিষ্ট মাপে টুকরা করে খাইট্টা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। খাইট্টা ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, প্রতি কোরবানি ঈদের এক মাস আগে থেকে অত্র এলাকার বিভিন্ন গরু-ছাগলের হাটে মাংস কাটার খাইট্টার বিক্রি করি।

আমার কাছে তেঁতুল ও বেল গাছের খাইট্টা আছে। বেল ও তেঁতুল গাছের কাঠ অনেক মজবুত হয়। এবার ঈদের সিজনে ব্যবসা বেশ ভাল হচ্ছে বলে তিনি জানান।

 

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS