শিক্ষা খাতে সুশাসন জরুরি: এনসিটিবি নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে মান-নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে নানা সময়েই এ সংস্থাটির কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, সম্পাদনা ও সংশোধনের ক্ষেত্রে যে ধরনের পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতা প্রয়োজন, তার অভাব দীর্ঘদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন একটি সুনির্দিষ্ট ও জটিল প্রক্রিয়া।
একে নিছক প্রশাসনিক দায়িত্ব হিসেবে দেখা অনুচিত। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞ ও যোগ্য শিক্ষাবিদদের দিয়ে বই রচনা, যথাযথ বিশেষজ্ঞ দিয়ে যাচাই-বাছাই, পেশাদার সম্পাদকদের সম্পাদনা এবং বানান ও ভাষার যথাযথ মান বজায় রেখে মুদ্রণ-এই প্রতিটি স্তরে পেশাদারিত্ব অপরিহার্য।
বিষয়ভিত্তিক অদক্ষতার উদাহরণগুলো বেশ দৃষ্টিকটুভাবে সামনে এসেছে। কোনো বিষয়ের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট বইয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্তি শুধু অদক্ষতা নয়, বরং দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
এতে করে শিক্ষার্থীদের হাতে ভুলে ভরা বই তুলে দেয়ার ঝুঁকি যেমন বাড়ে, তেমনি সামগ্রিকভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জ্ঞানসম্পন্ন, অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবীর অভাব নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদেরকে কেন উপেক্ষা করে অন্যদের এ দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে? এ অবস্থার পেছনে যদি কোনো গোপন স্বার্থ বা প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির ঘাটতি থাকে, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত।
শিক্ষা শুধু একটি খাত নয়, এটি একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের ভিত্তি। ভুলে ভরা, দুর্বলভাবে সম্পাদিত, নিম্নমানের পাঠ্যপুস্তক সেই ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়।
তাই এনসিটিবির কার্যক্রমে কাক্সিক্ষত মান নিশ্চিত করতে অবিলম্বে গঠনমূলক সংস্কার প্রয়োজন। দক্ষ জনবল নিয়োগ, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব বণ্টন এবং নিয়মিত মূল্যায়ন ছাড়া এই প্রতিষ্ঠান তার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্ভুল ও মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।