ঢাকা | জুন ৫, ২০২৫ - ৭:০১ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে জমে উঠেছে পশু হাট

  • আপডেট: Wednesday, June 4, 2025 - 12:22 am

ন্যায্য দামে পশু কেনাবেচায় খুশি ক্রেতাবিক্রেতারা

স্টাফ রিপোর্টার: মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র দুইদিন বাকি। ঈদকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই রাজশাহীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো।

টানা কয়েকদিনে ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর বিভিন্ন হাট। হাটগুলোতে দেশি গরু-ছাগলসহ সব ধরনের পশু উঠেছে। এবার ভারতীয় গরুর প্রভাব না থাকায় স্বস্তিতে দেশি খামারিরা। দামও ভালো পাচ্ছেন বিক্রেতারা।

গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পমুর দাম তুলনামূলক কম। তবে, বিক্রেতারা ন্যায্য দামও পাচ্ছেন। এ বছর ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

সেই সাথে হাটে অসুস্থ গরু-ছাগলের তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় ভেটেনারি ক্লিনিকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এবারের কোরবানি উপলক্ষে হাটে-হাটে ব্যতিক্রমি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।

মূলত রাজশাহীতে পশু কেনাবেচার জন্য বেশ কয়েকটি হাট রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সিটি হাট, দামকুড়া, নওহাটা, কাটাখালী, মহিষালবাড়ী, কাকনহাট, মচমইল, কেশরহাট, বানেশ্বর হাট ইত্যাদি।

সিটি হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা গণমাধ্যমকে জানান, গতবারের তুলনায় এ বছর দাম কম হলেও লোকসান হয়নি বিক্রেতাদের। ন্যায্য দামে পশু বিক্রি করছেন তারা। অপরদিকে তুলনামূলক কম দামে পছন্দের পশু পেয়ে ক্রেতারাও খুশি।

বছরের অন্য সময়গুলোতে সিটিহাট রোববার ও বুধবার সপ্তাহে দুইদিন বসলেও ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন কেনা-বেচা চলছে এ হাটে। এ হাটে মাঝারি ধরনের গরু বেশি দেখা যাচ্ছে। ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে মাঝারি সাইজের গরু।

যার কারণে মাঝারি সাইজের গরুর দিকে ঝুঁকছে ক্রেতারা। এসব গরু মূলত ১ লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারির চেয়ে একটু বড় গরু বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ থেকে ২ লাখ ২০ হাজারের মধ্যে। আর ছোট সাইজের গরু ৬৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

বিশেষ করে এবার নাম ডাকের মতো বড় গরু হাটে অনেক কম উঠছে। সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার ওপরে গরু ওঠেনি। এবার মহিষের দামও কিছুটা কম। সিটিহাটে মাঝারি সাইজের মহিষ বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখের মধ্যে।

সিটিহাটে গরু নিয়ে আসা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমি বেশ কয়েকটি গরু নিয়ে এসেছিলাম সব বিক্রি হয়ে গেছে। দাম ভালো পেয়েছি, লোকসান হয়নি। ক্রেতারাও খুশি।

চারঘাট উপজেলার গরু ব্যবসায়ী মোসাব্বের হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ভারত থেকে এবার গরু-মহিষের আমদানি নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি’র তৎপরতায় এবার ভারতীয় গরু-মহিষ নেই। তারপরও গত বছরের তুলনায় এবার ক্রেতা এখনো কিছুটা কম। ক্রেতা কমের সঙ্গে এবার দামও কম।

তিনি বলেন, এবার দেশিয় জাতের পর্যাপ্ত গরু-মহিষ কোরবানির জন্য রয়েছে। খামারিরা আগে থেকেই এসব গরু লালন-পালন করেছেন। কিন্তু দাম কম হলে তারা তো লোকসানের মুখে পড়বে।

আরেক গরু বিক্রেতা সুরমান বলেন, চারটি গরু হাটে এনেছি। একটি বিক্রি করেছি ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। আশা করেছিলাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো। লাভ কম হলেও খুশি। কারণ এবার হাটে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি গরু আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে যা দাম পেয়েছি তা খারাপ না।

আরেক বিক্রেতা আব্দুল্লাহ জানান, হাটে ভারতীয় গরু আসলে দেশি গরু ব্যবসায়ী বা খামারিরা বিপাকে পড়তো। সিটি হাটে গরু ক্রেতা সহিমুদ্দিন বলেন, ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছি। বাজেটের মধ্যে ভালো গরু পেয়েছি বলে মনে হচ্ছে।

আরেক ক্রেতা সোহরাব জানান, গতবারের তুলনায় এবার ন্যায্য দামে ভালো গরু কেনা যাচ্ছে।

সিটি হাটের ইজারাদারদের একজন খাইরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই হাটে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী টিম। জাল টাকা শনাক্তকরণে বসানো হয়েছে মেশিন। ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতার দিকে নজর রেখে এবার হাট পরিচালনা করা হচ্ছে।

এদিকে, প্রতিবছরের মতো এবারও হাটগুলোতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিরাপাত্তায় বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হাটগুলোতে রয়েছে পশু চিকিৎসক।

এছাড়া হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তের জন্য মেশিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংকও এ ব্যাপারে কাজ করছে। রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, জেলায় এবার কোরবানির জন্য ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি বিভিন্ন পশু রয়েছে। এই জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৭টি।

এই জেলা থেকে উদ্বৃত্ত ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৬টি পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলায় পাঠানো হবে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৪৩ লাখেরও বেশি পশু। বিভাগজুড়ে বসবে তিন শতাধিক পশুহাট। কোরবানির আগে এখন পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিভাগের আট জেলায় ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯টি গরু, মহিষ, ছাগল ও অন্যান্য কোরবানিযোগ্য পশু আছে। যা এই বিভাগের চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলাতেও যাবে।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ১৬১টি স্থায়ী এবং ১৪১টি অস্থায়ী হাট বসবে। বিভাগজুড়ে হাটগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে ২১৩টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম। এসব টিম গাভির গর্ভ পরীক্ষা ও পশুর স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধানে কাজ করবে।

এছাড়া হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে ব্যাংকের বুথও। পাশাপাশি ইজারাদারদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বসানো হবে সিসি ক্যামেরা।

খামারিরা বলছেন, গোখাদ্যের লাগামছাড়া দামের কারণে কোরবানির পশুর বাজারে প্রভাব পড়বে। দাম বেশি না হলে লোকসান হবে। যদিও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজশাহী বিভাগে এবারও কোরবানির পশুর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। তাই দাম খুব একটা বাড়বে না। সহনীয় একটা দাম থাকবে, এতে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও সমস্যা হবে না।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রতিটি হাটে সিসি ক্যামেরা, জেনারেটর, স্বেচ্ছাসেবক রাখতে বলা হয়েছে। জাল টাকা শনাক্তকরণ বুথ স্থাপনের জন্য ব্যাংকগুলোকেও কাজ করছে। সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাটকেন্দ্রিক পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন ছাড়াও বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS