চারঘাটে ঝুট কাপড়ের দড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী নারী-পুরুষ

মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামের নারী-পুরুষরা। এক সময় যাদের অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী এখন তাদের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার তাঁতারপুর গ্রামের প্রতিটি বাড়ি যেন একেকটি দড়ি তৈরির কারখানা। এখানে ঝুটের কাপড় থেকে তৈরি হচ্ছে নানান রঙের বিভিন্ন সাইজের দড়ি। ফলে পাল্টে যাচ্ছে প্রান্তিক জনপদের অসহায় নারী-পুরুষের জীবনযাত্রার মান ও গ্রামীণ অর্থনীতি।
স্থানীয়রা জানান, রাজশাহীর উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের তাঁতারপুর গ্রামের প্রায় ২শ পরিবারের এক হাজার নারী-পুরুষ এই পেশার সঙ্গে জড়িত। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ঝুট কাপড়ের বস্তার ওজন ৮০-৮৫ কেজি।
প্রতি কেজি ঝুট কাপড়ের দাম ৫৫ টাকা। প্রতি বস্তার ঝুট কাপড়ের দড়ি থেকে ১৬শ থেকে ১৮শ টাকা লাভ আসে। কোনো কোনো পরিবারের সদস্যরা সপ্তাহে দুই বস্তা ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরি করেন।
তবে অধিকাংশ পরিবারে বিনিয়োগের অর্থ নেই। তাই মজুরির ভিত্তিতে ঢাকার মহাজনদের কাজ করেন তাঁরা।
সাংসারিক কাজের পাশাপাশি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে দড়ি তৈরি। প্রতিটি মেশিন দিয়ে দিনে অন্তত ১০০-১৫০ পিস দড়ি তৈরি হয়। এ কাজে পুরুষরাও সহযোগিতা করেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি মায়েদের দড়ি তৈরি কাজে সহযোগিতা করছে সন্তানরাও। তাঁতারপুর গ্রামের ঝুট কাপড়ের ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করে এখানে বিক্রি করেন তিনি।
সেই কাপড় থেকে স্থানীয় নারী-পুরুষরা দড়ি তৈরি করেন। তৈরি করা দড়ি আবার তাঁর কাছেই বিক্রি করেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব দড়ি বগুড়া, রাজশাহী ও নাটোরসহ কয়েকটি জেলায় বিক্রি করা হয়। দড়ি তৈরির কারিগর গৃহবধূ লাভলি পারভীন বলেন, সংসারের কাজ শেষ করে অধিকাংশ সময় গল্প করে সময় কাটাতে হয়।
এ সময়টুকু এখন বসে না থেকে দড়ি তৈরি করে বাড়তি লাভ হচ্ছে।১০ বছর থেকে দড়ি তৈরির কাজ করে যাচ্ছি। প্রতি মাসে খরচ বাদে প্রায় ৪ হাজার টাকা আয় থাকে। বাড়তি আয়ে সংসার ভালো চলে। সংসারের উন্নয়ন হয়েছে।
একটা মেশিনে তিনজন কাজ করে একসঙ্গে দুইটি দড়ি তৈরি হয়। একজন মেশিনে থাকে আর দুজন ঝুট কাপড় ছেড়ে দেয়। আর যদি দুইজন হয় তাহলে একজন মেশিনে থাকে অপরজন কাপড় ছেড়ে দেয়। দুইজনে দিনে শতাধিক দড়ি তৈরি করা যায়।
দড়ি তৈরির কারিগর বুলবুল ইসলাম বলেন, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। বাড়িতে বসে ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরি করেন। নিজস্ব পুঁজি না থাকায় মহাজনদের কাজ করতে হয়।
এক কেজি দড়ি তৈরি করলে ১৫ টাকা পারিশ্রমিক পান। সারাদিনে ২০ কেজির মতো দড়ি তৈরি করেন। এতে দিনে তাঁর ৩০০ টাকা আয় হয়। যদি নিজের পুঁজি থাকত তবে ভালো হতো।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, নিজ উদ্যোগে তারা ঝুটের দড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছে বিষয়টি আমার অনেক ভালো লেগেছে। তাদের প্রতি আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা থাকবে।