শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য, সমাধানে চাই কার্যকর উদ্যোগ

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ বহুমাত্রিক সঙ্কটে নিমজ্জিত। স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়-প্রতিটি স্তরেই বিরাজ করছে অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার হতাশাজনক চিত্র।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, শিক্ষকদের দাবি পূরণে অনীহা এবং প্রশাসনের অদক্ষতা মিলে একটি হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে-যার ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া পড়ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ক্রমাগত শিক্ষার্থী আন্দোলনের ফলে ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও শীর্ষ প্রশাসকদের পদত্যাগের ঘটনা যেমন প্রশাসনিক সঙ্কটের ইঙ্গিত দেয়, তেমনি এ থেকে বোঝা যায়-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক চর্চা ও স্বচ্ছতার অভাব কতটা প্রকট।
অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও রাজনৈতিক প্রভাব, পর্ষদ গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব ও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে।
লাখ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী সময়মতো বেতন না পাওয়ার পেছনে একটি সেলের একজন কর্মকর্তা অসুস্থ হওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে-এটা কেবল প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনাই নয়, এক ধরনের অবহেলা।
পুরো দেশের শিক্ষকদের জীবনধারণ একজন সিস্টেম অ্যানালিস্টের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষকদের সম্মানজনক পারিশ্রমিক, নিয়মিত উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা-এসব মৌলিক চাহিদা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা বছরের পর বছর ধরে রাস্তায় অবস্থান করছেন।
এখন নীতিনির্ধারকদের কাছে এসব দাবি যেন কানে তুলোর দড়ি হয়ে থাকছে। শিক্ষকরা কেবল বেতনভোগী কর্মী নন, তারা জাতি গঠনের কারিগর। তাদের প্রতি রাষ্ট্রের এ উদাসীনতা এক গভীর সঙ্কটের ইঙ্গিত দেয়।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাত কলেজের নতুন দাবির আল্টিমেটাম, এবং অন্যান্য আন্দোলন সমেত পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তা কেবল শিক্ষা কার্যক্রমকেই বিঘ্নিত করছে না, বরং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।
সেশনজট, শিখন ঘাটতি, মানসিক চাপ-এসবের ফলে শিক্ষার্থীরা এক ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। শিক্ষাখাত কোনো বিচ্ছিন্ন খাত নয়। এটি দেশের উন্নয়ন, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং নাগরিক সচেতনতার মূল ভিত।
এই খাতে নৈরাজ্য চলতে থাকলে তার প্রভাব পড়বে সমগ্র জাতির ভবিষ্যতের ওপর। অতএব, এখনই প্রয়োজন-প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, অংশগ্রহণমূলক ও মানবিক শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে আরও সক্রিয় ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন ভূমিকা নিতে হবে। প্রয়োজনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ জরুরি-যাতে করে এই নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে দ্রুত শিক্ষা ব্যবস্থা উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।