চট্টগ্রামের বাজারে কোরবানির আগে কমে গেছে মশলার দাম

অনলাইন ডেস্ক: আর ক’দিন পরেই ঈদুল আযহা। বাড়তি চাহিদা থাকায় এই ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর দেশের সব পাইকারি ও খুচরা বাজারে হু-হু করে বাড়তে থাকে কোরবানির অপরিহার্য উপাদান মশলার দাম। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন নগরীর সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও বিভিন্ন খুচরা বাজারে। অধিকাংশ মশলার দাম কমে গেছে। এতে স্বস্তি মিলছে কোরবানিদাতা ভোক্তাদের।
আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা, পর্যাপ্ত আমদানি, বাজারে সরবরাহ ঘাটতি না থাকা, সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাওয়া এবং একইসঙ্গে তুলনামূলক চাহিদাও কমে যাবার কারণে মশলার দাম এবার কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মশলাজাত পণ্যের দর যাচাই করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এছাড়া খুচরা বাজারেও দর যাচাই করে বিভিন্ন ধরনের মশলার দাম তুলনামূলক কম পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে- দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দাম কমে যাওয়ায় বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৮ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি চায়না রসুন ১৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। তাছাড়া একই সময়ের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ টাকা কমে চায়না আদার দাম। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। অন্যদিকে পাইকারি বাজারটিতে বর্তমানে প্রতি কেজি কেরালা আদা ও দেশি রসুন ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়তদার মেসার্স বাচা মিয়া ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘এবার পাইকারি ও খুচরায় পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম গতবছরের চেয়ে অন্তঃত ৪০-৫০ টাকা কম আছে। অন্যান্যবার কোরবানির ঈদের আগে এ তিনটি পণ্যের দাম বেড়ে যেতো। এবার কমেছে, তার কারণ হচ্ছে, দেশি পেঁয়াজ-রসুন এখন বাজারে পর্যাপ্ত আছে। ভারতেও দাম কম। আমদানিও প্রচুর হয়েছে।’
চাক্তাই পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুকনো মশলার মধ্যে হলুদ প্রতিকেজি ১৯০ থেকে ২৩০ টাকা, দেশি শুকনা মরিচ ১২০ থেকে ১৭০ টাকা, ভারতীয় মরিচ ২১০ থেকে ২৫০ টাকা, বাদাম ১৪০ টাকা, ভারতীয় জিরা মানভেদে ৩৬০ থেকে ৬৬০ টাকা, মিষ্টি জিরা ১৬০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২২০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা, সাদা তিল ২১০ থেকে ২৪০ টাকা, কালো জিরা মানভেদে ৩৩০ থেকে ৩৭০ টাকা, সাদা ও লাল সরিষা ১০০ টাকা, মেথি ১৩০ টাকা, এরারুট ৩০০ টাকা, তিশি ১০০ টাকা, গোলমরিচ ১ হাজার ১৪০ টাকা, পাঁচফোড়ন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কালো তিল ১৪০ টাকা, ভারতীয় এলাচ ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকা, বড় দানা এলাচ মানভেদে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা ও ৪ হাজার ৬০০ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২০০ টাকা, কিসমিস ৫৩৫ টাকা, কালো কিসমিস ৫০০ টাকা, আলুবোকরা ৫৪০ থেকে ৫৬০ টাকা, জয়ত্রি ২ হাজার ৭০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৮০ টাকা, কাবাব চিনি ২ হাজার ২০০ টাকা, জায়ফল খোলা ৬৫০ টাকা ও প্যাকেট ৫৮০ টাকা, বচ মশলা ৭০০ টাকা, দারচিনি মানভেদে ৩৭০ থেকে ৪৫০ টাকা, স্টার মশলা ৮০০ টাকা, আদাশুট ৮০০ টাকা এবং টক লবণ প্রতিকেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী আবুল কাশেম জানান, পাইকারি বাজারে মসলার দাম কিছুটা কমেছে। এটার প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে। গতকাল খাতুনগঞ্জ গিয়েছিলাম তেল-চিনি-চাল-আটা ও মসলা আইটেম কিনতে দোকানের জন্য। অপ্রত্যাশিতভাবে এবার মসলার দাম কমে গেছে।
খাতুনগঞ্জে মসলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজী জসিম ট্রেডার্সের ম্যানেজার আশিকুর রহমান জানান, কোরবানির ঈদে প্রতিবছর মসলা জাতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ে। স্বাভাবিকভাবে চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে। কিন্তু এবছর এসব পণ্যের দাম গতবারের তুলনায় কম রয়েছে। কারণ বাজারে প্রচুর পণ্য মজুদ আছে কিন্তু বিক্রি নেই। ঈদ উপলক্ষে এবার আশানুরূপ ব্যবসাও হচ্ছে না।
গরম মশলার আমদানিকারক অমল সাহা বলেন, ‘গত ২০ থেকে ২২ বছরে মশলার দাম কোরবানির ঈদের আগে এভাবে পড়ে যেতে আমি দেখিনি। বলতে পারেন, এটা ২০ থেকে ২২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। এখানে বেশকিছু বিষয় কাজ করছে। প্রথমত, এখন কোনো সিন্ডিকেট নেই। পণ্য আমদানিতে এলসি খুলতে ব্যাংকগুলোতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এজন্য আমদানিকারক বেড়েছে, আমদানিও প্রচুর হয়েছে। বাজারের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি। এজন্য দাম কম। তবে পাইকারিতে যত কম বিক্রি হচ্ছে, খুচরায় তো সেভাবে কমেনি। এজন্য মনিটরিং জোরদার করা দরকার ছিল।’
দেশে কৃষিজাত পণ্যের বড় অংশ আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে। আর আমদানির জন্য অনুমতি নিতে হয় বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গত ১০ মাসে দেশে প্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৩৪ টন মশলাজাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে আছে-৯৯ হাজার ৮৫৮ টন রসুন, এলাচ ১ হাজার ৬১৪ টন, দারচিনি ১০ হাজার ৫৪৩ টন, লবঙ্গ ২ হাজার ১৫৪ টন, জিরা ৩ হাজার ৭০২ টন, পেস্তাবাদাম ৮২৭ টন, কিসমিস ৪ হাজার ৮২৩ টন, শাহী জিরা ২ টন, জয়ত্রি ২৯০ টন, কাবাব চিনি ২ টন, জায়ফল ২৭২ টন, কালোজিরা ৭ টন, গোলমরিচ ১ হাজার টন, মেথি ৭২ টন, আদা ২১ হাজার ১৯ টন, পেঁয়াজ ১৪ হাজার ৬৩ টন, হলুদ ৪ হাজার ৩২৮ টন, শুকনো মরিচ ১৭৯ টনসহ আরও বিভিন্ন পণ্য।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইন বলেন, এবার পাইকারিতে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী। এটা আমাদের জন্য স্বস্তির। খুচরা পর্যায়ে ভোক্তাদের সুফল পেতে হলে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
সূত্র: বাসস