পুঠিয়ায় জমিতে জোরপূর্বক পুকুর খনন, হামলায় আহত ৫

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর পুঠিয়ায় একজন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জমি জোরপূর্বক দখল করে পুকুর খনন করার অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের গোড়াগাছি হিন্দুপাড়ায় অবৈধভাবে এই পুকুর খননে বাধা দিতে গেলে হামলার শিকার হন কৃষকরা। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পরে গ্রামের লোকজন জোট বেঁধে ধাওয়া দিলে পুকুর খননকারিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এসময় কৃষকরা একটি মাটি কাটা যন্ত্র (এস্কেভেটর বা ভেকু) ভাংচুর করে এবং সেখান থেকে বেশ কিছু দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুকুর খননকারি ওই বিএনপি নেতার নাম আবুল কামাল।
তিনি দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। আবুল কালাম দুর্গাপুরের নওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী।
পুঠিয়া থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গতকাল শনিবার সকালে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনভাবেই যেন পকুর খনন করতে না পারে সেটি নজরদারি করা হচ্ছে। এর কয়েকদিন আগে সেখানে অভিযান চালিয়ে মাটি কাটা মেশিন ভেঙে দেয়া হয়েছে। তারপরও তারা গভীর রাতে খনন কাজ করতে গিয়েছিল। কোনভাবে সেখানে পুকুর খনন করতে দেয়া হবে না বলেন ওসি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিন্দুপাড়ার এক জমির মালিক বলেন, স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতাকর্মী অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কয়েকজন হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে জমি লেখে নেয়। বাকিরা দেয়নি। তারা কৌশলে জমিগুলো শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সনজিব ডাক্তারের নামে ডিট করে নেয়।
পরে তার কাছ থেকে ১০ বছরের জন জমিগুলো লিজ হিসেবে ডিট করে নেয় বিএনপি নেতা আবুল কালাম। অস্ত্রের মুখে ৫/৭ বিঘা জমি লিজ হিসেবে ডিট করে নিয়ে প্রায় ২০ বিঘা জমি দখল করে পুকুর খননের কাজ শুরু করে। স্থানীয় বিএনপি কর্মী আসাদুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে পুকুর খননের কাজ তদরকির দায়িত্ব পায়।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন কৃষকদলের আহ্বায়ক আবু আসাদ বলেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে আবুল কালাম বাহিনী ভেকু নিয়ে গিয়ে পুকুর খনন শুরু করে। এ সময় স্থানীয় কৃষকরা দিয়ে বাধা দেয়। এর পর কালাম বাহিনী অস্ত্র নিয়ে কৃষকদের ধাওয়া দেয়। খবর পেয়ে কৃষকদলের নেতাকর্মীরা কৃষকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পুকুর খননকারিদের ধাওয়া দেয়।
এ সময় তারা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের ফেলে যাওয়া কিছু দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো পুলিশে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। আবুল কালাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ের দিকে জমিগুলো সনজিব ডাক্তার ও তার ভাই পুকুর খননের জন্য লিজ নিয়েছিল। কিন্তু পট পরিবর্তনের কারণে তারা পুকুর খনন করতে পারিনি।
সম্প্রতি সনিজব আমাকে জমিগুলো ১০ বছরের জন্য লিজ দেয়। এর পরও আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করি। জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পুকুর খনন কাজ শুরু করি বলেও দাবি করেন আবুল কালাম।
কৃষকদের ওপর হামলার বিষয়টি জানতে চাইলে আবুল কালামের দাবি, কৃষকদল নেতা আবু আসাদ মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা না দেয়ায় তারা আমার লোকজনের ওপর হামলা করে। এ সময় তারা আমার ভেকু ভাঙচুর করে এবং এর চালককে মেরে জখম করে। আসাদুল ইসলাম বলেন, ওই পুকুরের সঙ্গে আমার কোন সংশ্লিষ্টা নেই। তবে পুকুর খনন কাজের জন্য জনবল সরবরাহ করেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু না।
দুই দফায় হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় কৃষকসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে শাওন, রবিউল, মোস্তাফিজুর ও ভেকু চালক রকিবকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, পুঠিয়া উপজেলায় কোন পুকুর খননের অনুমতি দেয়া হয়নি। এসব অবৈধ পুকুর খননের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোনভাবেই কাউকে পুকুর খনন করতে দেয়া হবে না।