পাঁচ বছরে এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী নেবে জাপান

সোনালী ডেস্ক: জাপানের কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবসায়ীরা দেশের ক্রমবর্ধমান কর্মী ঘাটতি মেটাতে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে এক লাখ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
বৃহস্পতিবার টোকিওতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এমন ঘোষণা দেয়া হয়। ‘বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাপানে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার ক্ষমতার সবকিছুই করবে।
তিনি বলেন, এটা আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দদায়ক দিন হতে যাচ্ছে, সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক দিন হতে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশিদের জন্য শুধু কাজ নয়, জাপানকে জানার দ্বার উন্মোচিত হবে। এদিন প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
একটি বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ কাইকম ড্রিম স্ট্রিটের মধ্যে এবং দ্বিতীয়টি বাংলাদেশের বিএমইটি এবং জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস (জাপানে পরিচালিত ৬৫টিরও বেশি গ্রহণকারী কোম্পানি) এবং জেবিবিআরএ-এর (জাপান বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই আলোচনা দরজা খোলার জন্য। বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ, যার অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নিচে।
তিনি বলেন, সরকারের কাজ হচ্ছে তাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া। শিজুওকা ওয়ার্কপ্লেস এনভায়রনমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট কো-অপারেটিভ সংস্থার প্রতিনিধি মিতসুরু মাতসুশিতা বলেন, অনেক জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশিদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মেধাবীদের মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে।
তাদের মেধাকে লালন করা আমাদের কর্তব্য। এনবিসিসির চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা স্মরণ করেন যে, প্রায় ১৪ বছর আগে প্রফেসর ইউনূস জাপানে এসেছিলেন এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নারীদের সহায়তা করার গল্প বলছিলেন। তিনি বলেন, তাদের ব্যবসার প্রথম তিন দশকে তারা একটি মানসম্পন্নকর্মী বাহিনী গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
আমাদের ফেডারেশন তরুণ ও সক্ষম শ্রমিকের জন্য বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বাংলাদেশ ও জাপান উভয়ের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
আগামী পাঁচ বছরে আমরা এক লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। জাপানি শিল্পে বাংলাদেশিদের নিয়োগের বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে ওয়াতামি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট মিকি ওয়াতানাবে বলেন, বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুল প্রতিবছর দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয় এবং তারা এখন এই সংখ্যা ৩ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে তারা জাপানের চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেইনি অ্যান্ড স্কিলড ওয়ার্কার কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (জিটকো) চেয়ারম্যান হিরোয়াকি ইয়াগি জাপানের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভাষা শিক্ষকের সংখ্যা এখনও কম। জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিকি হিরোবুমি বলেছেন, জাপানের জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং এজন্য বাংলাদেশি জনশক্তির সহায়তা প্রয়োজন।
এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, জাপানের জন্যও আশাব্যঞ্জক হতে পারে। স্বাগত বক্তব্যে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী বলেন, ২০৪০ সাল নাগাদ জাপানে শ্রমিক সংকট এক কোটি ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে এবং বাংলাদেশ আরও দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের এই সুযোগটি গ্রহণ করতে পারে।