ঢাকা | জুন ৪, ২০২৫ - ৯:২৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম

রাবিতে হামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

  • আপডেট: Thursday, May 29, 2025 - 12:14 am

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবার রাতে হামলার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে ‘শাহবাগ বিরোধী ঐক্য’ এবং ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’। বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এবং দুপুর সাড়ে ১২টায় একই জায়গায় সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরও গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মৌখিক বক্তব্যে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের সংগঠক ও রাবি শাখা ছাত্র মিশনের সভাপতি জি এ সাব্বির বলেন, ‘দেশের স্বাধীন বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপকারী ২০১৩ সালে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ নামে সৃষ্ট মবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ও সেই মব ইন-জাস্টিসের বিচার দাবি করে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’র ব্যানারে রাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। যেখানে বিভিন্ন শিক্ষার্থীবৃন্দ, রাজনৈতিক অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হন।

তথাকথিত গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের ব্যানারে বাম-শাহবাগী গোষ্ঠী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একটি মশাল মিছিল ডাকে। যখন জানতে পারি তাদের কর্মসূচি হচ্ছে না তখন বিশৃঙ্খলা এড়াতে পরিবহন চত্বরের একটি ফাঁকা জায়গায় সমবেত হই এবং আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি কিছু সময় দেরীতে শুরু করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবহন চত্বরে আসার পর সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’র বিভিন্ন সংগঠক ও নেতৃবৃন্দ। ঠিক তখনই পেছন থেকে বাম সংগঠনের গুটিকয়েকজন মশালধারী আমাদের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার, জামায়াত-শিবির’ বলে বুলিং করে। তারা স্লোগান দিয়ে বারবার মশাল নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসে।

ইচ্ছে করেই একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে ভিক্টিম কার্ড খেলার পুরোনো চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে আমাদেরকে লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করে। ইট গিয়ে লাগে আমাদের সহযোদ্ধা তারেকের গায়ে। এরপরই মূলত ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।’

জি এ সাব্বির সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সবাইকে শান্ত করে দিয়ে আমরা যখন অন্য দিকে চলে গেছি তখন পুনরায় আমরা যে স্থানে ছিলাম সেখানে এসে আমাদের গায়ে পড়ে হাতাহাতি শুরু করেছে। একপর্যায়ে আমাদের গায়ে জলন্ত মশাল পর্যন্ত ছুঁড়ে মারে লালবাহিনীর সন্ত্রাসীরা। এতে আমাদের কয়েকজন ভাই আহত হয়।

উভয়পক্ষের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি থেকে আমাদের কয়েকজন সংগঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য। এই ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলও লালবাহিনীর ফাঁদে পা দিয়ে বিবৃতি ও মিছিল করেছে। যা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার।’

এদিকে দুপুরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীকে দায়ী করে হামলাকারীদের বিচার এবং তাদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র গণমঞ্চের সভাপতি নাসিম সরকার।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাসিম সরকার বলেন, ‘চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দায় মুক্তি দেওয়ার প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মশাল মিছিল ডাকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। একই সময়ে ছাত্র শিবিরের একটি আনন্দ মিছিল পরিবহন মার্কেটে বামপন্থীদের আড্ডার স্থলকে ঘিরে বারবার প্রদক্ষিণ করতে থাকে।

আমরা তাদের কর্মসূচি সমাপ্ত হওয়ার অপেক্ষা করতে থাকি। তাদের সমাবেশ শেষ হওয়ার পরে ৪৫ মিনিট বিলম্বে সোয়া ৮টায় মিছিল শুরু করি।

সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র শিবিরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নওসাজ্জামান, ছাত্র মিশনের সভাপতি জি এ সাব্বিরসহ আরও অনেকের নেতৃত্বে আনুমানিক ২০০ জনের একটি মব আমাদের দিকে তেড়ে আসে এবং অতর্কিত ইট পাটকেল, চেয়ার ও লাঠি ছুঁড়ে মারতে শুরু করে। আমরা উত্তেজিত না হয়ে, সংঘর্ষ এড়িয়ে মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হই।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘পরবর্তীতে মিছিলটি নিয়ে আমরা বুদ্ধিজীবী চত্ত্বর সংলগ্ন প্যারিস রোডে পৌঁছালে আরও দুই দফা হামলা করা হয়। এ সময় আমরা প্রায় সকলেই ইট-পাটকেলের মাধ্যমে আঘাত প্রাপ্ত হই।

ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে মাটিতে ফেলে এলোপাথাড়ি লাথি-ঘুষি মারা হয় এবং বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক তারেক আশারাফকে ইটের আঘাতে রক্তাক্ত করা হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলার কারণে বারবার হামলার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে নাসিম সরকার বলেন, ‘চব্বিশ পরবর্তী ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কায়দায় এই ভয়াবাহ সন্ত্রাসী আক্রমণের বিচার চাইতে আমরা প্রক্টর অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি প্রক্টরিয়াল বডি চা চক্রে বসে সিসিটিভি ফুটেজ দেখছিল। এতো বড় হামলার ঘটনা ঠেকানোর তারা কোনো চেষ্টাই করেনি।

পরিবহনে হামলা পরে আরও দুই দফা হামলা করা হয়। প্রক্টরিয়াল বডি তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিলে আমাদের সহযোদ্ধারা এভাবে রক্তাক্ত হত না। এ ঘটনায় আমরা নিরাপত্তা চাইলে প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

আমরা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। প্রশাসন অবিলম্বে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তবে প্রশাসনকে সন্ত্রাসীদের তাবেদার ধরে নিয়ে অপসারণ চাইতে বাধ্য হব।’

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশালমিছিলে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে’ ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের হামলার অভিযোগের ঘটনায় বিচারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অভ্যত্থান পরবর্তী সময়ে এধরণের ঘটনা কাম্য নয় উল্লেখ করে প্রশাসনকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

গতকাল বুধবার বিকেল ৬টায় ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য’-এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

গত মঙ্গলবার রাতে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়ার ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যর’ ব্যানারে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতারা।

তবে উস্কানি দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ করেছে শাহবাগ বিরোধী ঐক্য। হামলার ঘটনায় বাম জোটের চার নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি নোমান ইমতিয়াজ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে শাহবাগবিরোধী ঐক্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের অন্তত চারজন নেতা আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘গতকাল আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে ছাত্রশিবির ইটপাটকেল ছুঁড়ে চালিয়ে আমাদের আঘাত করেছে। তিন-তিনবার এই হামলা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা যে কারো সাংবিধানিক অধিকার।’

ছাত্রশিবির, ছাত্রলীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘অতীতে আমরা দেখেছি ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাঁধা দিত। কিন্তু তারা এটা স্বীকার করতো না। বর্তমান ছাত্রশিবিরও ছাত্রলীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও আমাদের নিরাপত্তা চাই। প্রশাসন যদি এদের বিচার করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা ধরে নেব প্রশাসনের মদদেই ছাত্রশিবির আমাদের ওপর হামলা করেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার শাহারিয়ার আলিফ বলেন, ‘বিগত সময়ে ছাত্রশিবির মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রূপমসহ অনেক শিক্ষার্থীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।

তাদের এই নৃশংসতা ক্যাম্পাসে নতুন কোনো ঘটনা নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি একটি সহিংস রাজনীতি।’

ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাইসার আহমেদ বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই ছাত্রলীগ পরিবহন মার্কেটে যেভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর  হামলা চালিয়েছে, ঠিক একই জায়গায় গতকাল সন্ত্রাসী ছাত্রশিবির আমাদের ওপর হামলা করেছে।

ক্যাম্পাসে কীভাবে ভিন্নমত দমন করা হচ্ছে, সেটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। গতকাল চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ওপর হামলার ঘটনা উৎকৃষ্ট উদাহরণ।’

সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেন। এ সময় আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS