জমে উঠেছে বিখ্যাত বানেশ্বরের আমের হাট

মহাসড়কে তীব্র যানজট
মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: রাজশাহী জেলার বিখ্যাত বানেশ্বর হাটে জমে উঠেছে আমের বাজার। গোপালভোগ বা হিমসাগর কেনাবেচা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুটি জাতের আমও।
তবে গত বছরের চেয়ে এবার হাটে তিনগুণ আমের আমদানি বেশি বলে জানিয়েছেন হাটের ইজারাদার। আমদানি বেশি বেচাকেনা কম হওয়ায় আমের দাম একেবারে পড়ে গেছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
এদিকে মহাসড়কের ধারে হাট বসায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। শত শত ট্রাক, মিনিবাস, লরি মহাসড়কে তীব্র যানজটে আটকে আছে। এতে পথচারিরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাটটি পুঠিয়া উপজেলা হলেও দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট, পবা, মোহনপুর, বাগমারাসহ সব উপজেলার আম মূলত বেচাকেনা হয় এই বানেশ্বর হাটে। এ হাটে রয়েছে কয়েকটি বিশাল মোকাম।
গত মৌসুমের তুলনায় এবার প্রতি মণ আম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কম দামে কেনাবেচা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন জেলার সবচেয়ে বড় বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে চাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ইঞ্জিনচালিত নছিমন-করিমনে আম নিয়ে আসছেন।
এসব গাড়িতে ৩০ থেকে ৬০টি ক্যারেট (আম রাখার ঝুড়ি) আম থাকছে। মহাসড়কের ধারে হাট বসায় তিল ধরনের ঠাঁই নেই হাটে। হাটের দুই তিন কিলোমিটার আগে থেকেই আটকে আছে শত শত আমের গাড়ি।
বাজারে গত কয়েক দিন প্রকারভেদে প্রতি মণ গোপালভোগ আম ২ হাজার থেকে ২১০০শ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার ক্রেতা সঙ্কটে সেই আম বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে।
হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৫৫০ মণ দরে। আর গুটি জাতের আম প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে। সড়কের ওপরে বসা আমের হাটে কেনাবেচা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
মহাসড়কের ধার হাট বসার কারণে বেলপুকুর থেকে শিবপুর পর্যন্ত তীব্র যানজট হওয়ায় সড়কে ভোগান্তি এতে এড়াতে ট্রাফিক পুলিশ, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীদের কাজ করতে দেখা গেছে।
বানেশ্বর হাটে আম বিক্রি করতে আসা দুর্গাপুর উপজেলার সাঁয়বাড় গ্রামের হেলাল উদ্দিন বলেন, বৃষ্টি হওয়ায় গাছে আম পেকে যাচ্ছে। তাই গোপালভোগ জাতের ৫টি গাছের ৮০ ক্যারেট আম নিয়ে এসেছেন তিনি।
আমের দাম এবার কেমন পাওয়া যাচ্ছে জানতে চাইলে হেলাল বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের দাম অনেক কম। গতবারের চেয়ে মণে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে।
বানেশ্বর হাটের আম বিক্রেতা রনি ইসলাম বলেন, এখানে সকাল বিকাল আমের বাজারদর কম বেশি হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার হাটে প্রচুর আমের আমদানি। একেবারে কেনাবেচা নেই। দাম কমে গেছে।
বুধবার ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা মণ দরে গোপাল বিক্রি করছি। গতকাল সেই আম ১৫০০ থেকে ১৬০০শ টাকা দরে বিক্রি করছি। এছাড়া হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বানেশ্বর বাজারে আম কিনছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তার বাড়ি টাঙ্গাইল। পরিবারের জন্য আম কিনে পাঠাবেন।
তরিকুল বলেন, এই হাটে আগে আম খেয়ে স্বাদ বুঝে তারপর কেনার সুযোগ আছে। তাই আগে পাকা আম খেয়ে স্বাদ বুঝছি। তারপর পরিবারের জন্য দুই মণ আম কিনবেন।
জানতে চাইলে বানেশ্বর হাটের ইজারাদার রাসেল সরকার বলেন, বৃহস্পতিবার হাটে এতো আমের আমদানি যে তিল ধরনের ঠাঁই নাই। সব সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। গতবারের চেয়ে এবার বাজারে তিনগুণ আম বেশি। তাই একেবারে দাম পড়ে গেছে। ক্রেতা নাই।
এছাড়াও মহাসড়কে বেলপুকুর থেকে শিবপুর পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা দিয়ে। যানজট নিয়ে আমরা আজই জরুরি মিটিং ডেকেছি। ইউএনও, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের লোকজন মিটিংয়ে উপস্থিত থাকবেন। আমরা চাইবো যেন হাটটি মহাসড়ক থেকে কলেজ মাঠে নেয়া যায় কিনা।
ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গত ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম পাড়া যাবে। এ ছাড়া উন্নত জাতের আমগুলোর মধ্যে ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রাণীপছন্দ বা লক্ষণভোগ ও ৩০ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাতি পাড়া যাবে।
১০ জুন থেকে ব্যানানা ও ল্যাংড়া আম পাড়া যাবে। ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি-৪, আশ্বিনা আম পাড়া যাবে ১০ জুলাই থেকে এবং ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। হেক্টর প্রতি সম্ভাব্য গড় উৎপাদন ১৩ দশমিক ২৬ টন। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ টন।
এবার শুধু রাজশাহী জেলা থেকে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। মহাসড়কে যানজট নিরসন বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ.কে.এম. নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, এ ব্যাপারে আমরা মিটিং করছি।
মিটিং আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে আমের হাট নিয়ে। এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো বলে জানান ইউএনও। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এই অঞ্চলে বড় ধরনের কোনো ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়নি। তাই কম মুকুল আসলেও যেসব আম গাছে ধরেছিল, সেগুলো টিকে গেছে।