কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কামারপল্লিতে বেড়েছে ব্যস্ততা

মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কামার কারিগররা। সারাবছর কাজ কম থাকলেও এখন ঈদকে ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে।
পশু কোরবানিতে ব্যবহৃত দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে তারা, তাই দম ফেলার ও সময় নেই কামারদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন কামাররা।
কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েক গুণ ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কামারদের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কামার পল্লিতে সারা বছরই কামারদের তৈরি লোহার সামগ্রীর চাহিদা থাকে। কিন্তু পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কামার কারিগরদের এখন কঠোর পরিশ্রম আর ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে সময় পার করতে হচ্ছে।
সারা বছর খুব একটা হাতে কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে ঘিরে বেড়ে যায় তাদের কর্মব্যস্ততা। কয়লার গণগণে আগুনে রক্তিম আভা ছড়ানো চাপাতি, বটি বা ছুরির ওপর পড়ছে হাতুরির আঘাত।
আঘাতের পর আঘাতে রূপ দেয়া হচ্ছে চাপাতি, ছুরি, দা,বটিসহ নানা ধরনের ধারালো জিনিসপত্রের। কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। তবে ঈদের দুদিন আগ থেকে রাত-দিন বেচাকেনা আরও হবে বলে তারা জানান।
উপজেলার কামারের মোড় মনোরঞ্জন দাস বলেন, সারা বছরের মধ্যে কোরবানি ঈদেই আমাদের বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম বেশি। দুই মাস আগেও প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিল ৪শ’ থেকে ৪৫০ টাকা। সেই কয়লা এখন ৮শ’ থেকে ৮৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
তাই তারা চাপাতি, ছুরি ও দা’র দাম একটু বেশি নিচ্ছেন। কামার কারিগররা জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছে কামার পট্টিতে। বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে।
পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তারা বলেন।
লিটন কর্মকার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, বহু বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকে ব্যবসা পরিবর্তন করে ফেলেছেন। কিন্তু, ভিন্ন কিছু করার অভিজ্ঞতা না থাকায় কামারের পেশাই পড়ে আছি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর দাম বেড়েছে, মানও বেড়েছে। ছুরি কিনতে আসা রাজু নামে একজন বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার পশু কাটার অস্ত্রের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।
এখন কোরবানির জন্য প্রয়োজন, তাই দাম একটু বেশি হলেও কিনতেই হবে। মোরশেদা বেগম নামে এক নারী ক্রেতা বলেন, ঈদের জন্য একটি বটি কিনতে এসেছি। ৩১০ টাকা দাম নিয়েছে। আগে এই বটিটি ২ থেকে আড়াইশো টাকা দাম ছিল।
এখন বেশি দাম তবুও কোরবানির জন্য কিনতে হচ্ছে। কামার দোকান মালিকরা জানান, বছরের ১১ মাস কোনোরকম টিকে থাকলেও কোরবানির সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েন কামার শিল্পীরা।
বিক্রি ও শান দিয়ে প্রতিদিন তারা পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার মতো আয় করছেন। মূলত কোরবানির সময়ে উপার্জন করা টাকা দিয়েই সারা বছর ব্যবসা টিকিয়ে রাখেন।
কোরবানির আগে আকার ও ওজন ভেদে দাম নির্ধারণ করা হয়। বছরের এই সময়টায় এসব সামগ্রীর চাহিদা বেশি হওয়ায়, দামও একটু বেশি বলে তারা জানান।