স্বাস্থ্যব্যবস্থা জনবান্ধব করতে স্বাস্থ্যবিমার বিস্তার ঘটানো দরকার

দেশের সংবিধান অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। পরিতাপের বিষয়, মৌলিক এ অধিকার নিশ্চিতে সার্বিকভাবে কোনো অগ্রগতি তো নেই-ই; উল্টো স্বাস্থ্যসেবা পেতে নাগরিকের এ ব্যয় দিন দিন বাড়ছেই এবং তা মেটাতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হলো সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন। সুতরাং বিষয়টির গুরুত্ব ভালোভাবে বিবেচনায় না নেয়ার পরিণতি কোনো দিক দিয়েই যে ভালো হবে না, তা বলাই বাহুল্য। আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত।
বিশেষ করে ওষুধের ক্ষেত্রে এ ব্যয় সাধারণ মানুষের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। শুধু ওষুধে তাদের ব্যয় হয় ৬৪ শতাংশ টাকা, যার পুরোটাই যায় তাদের পকেট থেকে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ওষুধ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম। পাশাপাশি বাড়ছে চিকিৎসকের ফি। রোগনির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ বাড়ছে।
সরকারি হাসপাতালের দূরবস্থার কারণে মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তদেরও ছুটতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। সেসব স্থানে খরচের কোনো লাগামই নেই। ফলে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বহু পরিবারই দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। ব্যক্তির চিকিৎসা খরচ ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।
এর আগেও অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে, উচ্চ ব্যয়ের কারণে বহু মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছে না। আবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মাঝপথে চিকিৎসা থেকে সরে যাচ্ছে।
ইতিপূর্বে বিবিএসের এক জরিপে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ গ্যাস্ট্রিক, রক্তচাপ, বাতজ্বর, হাঁপানি ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলেও তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কোনো ধরনের চিকিৎসাই নেয় না। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখের মতো।
এর মধ্যে মাত্র ৫৯ লাখ রোগী চিকিৎসা নেয়। বাকি ৭১ লাখ রোগীই রয়ে যায় চিকিৎসার বাইরে। তারা ডায়াবেটিস ছাড়াও দ্রুত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়। তখন তাদের চিকিৎসার ব্যয় আরও বেড়ে যায়, যা বহন করা পরিবারের পক্ষে আরও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ নিয়ে কোনোই সন্দেহ নেই।
এই পরিস্থিতিতে দেশে স্বাস্থ্য খাতে নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিমার বিস্তার ঘটানো দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যয় কমাতে সরকারি হাসপাতালগুলোয় প্রচলিত ডিসপেনসারির পরিবর্তে ফার্মেসি চালুর চিন্তা করছে বর্তমান সরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে সাধারণ মানুষ যে দামে ওষুধ কেনেন, তার তিন ভাগের এক ভাগ দামে কিনতে পারবেন।
সত্যিকারই যদি তা হয়, তা অত্যন্ত ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় কাজ হবে। দেশের অধিকাংশ মানুষের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চলমান ওষুধের ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে সরকারের এ উদ্যোগ নিয়ে ভাবনা সন্দেহাতীতভাবে সাধুবাদযোগ্য। আমরা আশা করি, সরকারের এ উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।