ঢাকা | জুন ২১, ২০২৫ - ৪:২৬ অপরাহ্ন

দিনাজপুর শহরের লিচুর বাজার জমে উঠেছে

  • আপডেট: Tuesday, May 27, 2025 - 4:42 pm

অনলাইন ডেস্ক: জেলার ঐতিহ্যবাহী বেদানা লিচু সহ সব ধরনের লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে।মহা- উৎসবে চলছে লিচু বেচা কেনা। শহরের লিচুর বাজার জমে উঠেছে।

সরেজমিন গতকাল সোমবার বিকেলে জেলার কালিতলা লিচুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে,মধু মাসে লিচুর বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এখান থেকে বিভিন্ন যানবাহনে সুস্বাদু লিচু বেদানা সহ অন্যান্য লিচু গুলো ব্যাপারীরা বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনুযায়ী নিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিন গতকাল সোমবার বিকেলে জেলার কালিতলা লিচুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে,মধু মাসে লিচুর বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এখান থেকে বিভিন্ন যানবাহনে সুস্বাদু লিচু বেদানা সহ অন্যান্য লিচু গুলো ব্যাপারীরা বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনুযায়ী নিয়ে যাচ্ছে।

একই অবস্থা লক্ষ্য করে গেছে শহরে অস্থায়ী লিচুর পাইকারি বাজার গোর- এ বড় ময়দানের শিশুপার্ক সংলগ্ন এলাকায় বসেছে লিচু ও আমের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার। এখানে লিচু ও আমের বাগান মালিকেরা তাদের অর্জিত লিচু পাইকারি বিক্রির জন্য আড়তে নিয়ে আসছেন।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারেরা লিচু ক্রয়ের জন্য এই বৃহৎ পাইকারি বাজারে আসছেন। পাইকারেরা আড়তদার দের সাথে দরদাম করে তাদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী দিনাজপুর ঐতিহ্যবাহী বেদানা লিচু সহ মাদ্রাজি, কাঁঠালি, বোম্বাই ও চায়না থ্রি সহ উন্নত জাতের লিচু  স্বাচ্ছন্দ্যে ক্রয় করে বিভিন্ন পরিবহন যোগে তাদের গন্তব্যস্থলে নিয়ে যাচ্ছে।

লিচুর পাইকারি বাজারে লিচু ক্রয় বিক্রয়ের এক মহা উৎসব চলছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই পাইকারি বাজারে লিচু ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। আবার খুচরা ব্যবসায়ীরা এখানে আগত ক্রেতাদের নিকট লিচু বিক্রি করছেন। লিচুর বাজারগুলোতে লিচু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাক- ডাকে সহ গরম করে ক্রেতাদের নিকট লিচু বিক্রি করছেন। অনেক ক্রেতায় লিচু ক্রয়ের পূর্বে লিচুর অবস্থান ও স্বাদ যাচাইয়ের জন্য লিচু খেয়ে দেখে ক্রয় করেছেন।

এদিকে জেলার বিভিন্ন অফিস আদালতের কর্মকর্তারা এই জেলায় চাকরি করার কারণে তাদের উচ্চ মহলের কর্তা ব্যক্তিদের এই মধু মাসে লিচু উপহার দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করতে হয়। এজন্য এসব অফিস আদালতের থেকে আগাম লিচু ক্রয় করার জন্য সদর উপজেলার মাছিমপুর, সিকদারহাট, পুলহাট, মহব্বতপুর, উলিপুর, আউলিপুর, এবং বিরল উপজেলার মাধববাটি, বোডেহাট,  ধুকুরঝারি,সহ একাধিক এলাকায় অবস্থিত উন্নত মানের লিচু ক্রয়ে তারা বাগানে গিয়ে লিচুর মান যাচাই করেছেন। পছন্দ হলে চাহিদা অনুযায়ী লিচু ক্রয় করছেন।তাদের লিচু নিজস্ব পরিবহনে যত্ন সহকারে অফিসের নিজস্ব লোক মারফত ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় দপ্তর প্রধানদের উপ-ঢৌকন হিসেবে প্রেরণ করার মহা উৎসব চলছে।

লিচু বাগান মালিকেরা বলছেন,ভালো উন্নত মানের লিচু প্রতি বছর বাগান থেকেই বিভিন্ন সরকারের দপ্তরের কর্মকর্তারা এভাবে ক্রয় করে নিয়ে যায়।এবারও একই ভাবে বাগান থেকে উন্নত-মানের লিচু বিক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। বাগান মালিকেরা তাদের বাগান থেকে যত্ন সহকারে লিচু পেড়ে এসব ভিআইপি ক্রেতাদের নিকট যানবাহনের পরিবহনের জন্য স্বচ্ছ ভাবে বাঁশের ঝুড়িতে লিচুর পাতা বিছিয়ে যত্ন সহকারে প্যাকেটিং করে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। প্রতিদিন লিচুর বাগানগুলো থেকে কয়েক শত যানবাহনে লিচু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এরই মধ্যে বাজারে মাদ্রাজি, বেদানা ও চায়না-৩ জাতের লিচু থাকলেও মোম্বাই, হারিয়া, চায়না-২, মোজাফরি, কাঁঠালি জাতের লিচু বাজারে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা চিন্তা করে লিচু চাষিরা একটু আগে-ভাগেই বাগান থেকে লিচু পাড়তে শুরু করেছেন।

গতকাল সোমবার শহরের ফলের বাজার কালিতলা নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। জাত এবং আকার-ভেদে বিভিন্ন দামে লিচু বিক্রি হচ্ছে। যেমন প্রতি একশত লিচু মাদ্রাজি বিক্রি হচ্ছে   ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা, বেদানা লিচু বিক্রি হচ্ছে, ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা, এবং চায়না-৩ বিক্রি হচ্ছে, ৮শ থেকে ৯শ টাকা। দিনাজপুরের উৎপাদিত লিচু শতকরা ২০ ভাগ অত্র জেলার চাহিদা মিটিয়ে, শতকরা ৮০ ভাগ লিচুই চলে যাচ্ছে দেশের অন্যান্য জেলায়।

এমনকি দিনাজপুর বেদানা লিচু জিআই পণ্য হিসেবে ইতোমধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিদেশে রপ্তানি করে কৃষি অর্থনীতিতে একটি নতুন সম্ভাবনার দাঁড় উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি এই সুস্বাদু বেদানা লিচু করার জন্য কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছেন।গত বছর দিনাজপুরের সুস্বাদু বেদানা লিচু ফ্রান্স, ক্যানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় যত্ন সহকারে পাঠানো হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (গবেষণা) মো. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল বলেন, চলতি বছর সুস্বাদু বেদনা লিচু, বেশ কয়টি দেশ থেকে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।তাদের আগ্রহ অনুযায়ী লিচু পাঠানোর জন্য প্রস্তুতির কাজ চলছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

জেলা শহরে কালিতলা নিউ মার্কেটের লিচুর আড়তদার ও ব্যবসায়ী মওলা বক্স  বলেন, কিছুদিন পূর্বে প্রচণ্ড রোদ আর গরমের কারণে মাদ্রাজি লিচু ঝরে পড়ায় এই লিচুর সরবরাহ একেবারেই কম। সরবরাহ কম থাকায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, এর ফলে ক্রেতাদের একটু বেশি দামে কিনে নিয়ে  যাচ্ছে।তবে তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এবার লিচুর আমদানি  ভাল রয়েছে।

লিচুর খুচরা ব্যবসায়ী আনিসুর বলেন, ঢাকা থেকে আগত পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারণে লিচুর বাজার চড়া। আমরা স্থানীয় বাজার ও মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বেদানা লিচু ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় নিচ্ছি। সেখানে ঢাকার পাইকাররা নিচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা দরে। এর ফলে লিচু চাষিরা ঢাকার পাইকারদের সাথে ব্যবসা করছে। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে ক্রেতাদের ওপর। একটু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে লিচু।

সদর উপজেলা থেকে লিচু কিনতে আসা ক্রেতা মোকলেসুর রহমান বলেন, গতবারের তুলনায় দাম একটু বেশি। তবে দাম যাই হোক বছরের ফল খেতে তো হবেই।

নিউমার্কেটের কয়েকজন ইজারাদার বলেন, এটা দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় ফলের বাজার। এখানে দৈনিক আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার লিচু বিক্রির লেনদেন হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সম্ভাবনাময় ফলের এই বাজারটি দেশের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বাগান মালিকেরা ব্যক্ত করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. আনিসুজামান বলেন, দিনাজপুরে ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান আছে।লিচু বাগানগুলোতে গাছ রয়েছে,  ৯ হাজার ৭৯৮টি। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন লিচু। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানিতে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সূত্র: বাসস

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS