রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনে নিহত ১৩

অনলাইন ডেস্ক: রাশিয়ার ভয়াবহ ড্রোন হামলায় রোববার ইউক্রেনে অন্তত ১৩ জন নিহত এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। যদিও এই ভয়াবহ হামলার মধ্যেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময় সম্পন্ন করেছে উভয় পক্ষ।
কিয়েভ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইউক্রেনের জরুরি সেবা সংস্থা রোববার রাতকে ‘সন্ত্রাসের রাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।সংস্থাটি বলেছে, রাজধানী কিয়েভসহ পুরো ইউক্রেনে দ্বিতীয় রাতের মতো ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে মস্কো।
হামলায় নিহতদের মধ্যে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিতোমির এলাকায় ৮ ও ১২ বছর বয়সী দুই শিশু এবং ১৭ বছরের এক কিশোর রয়েছে। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে নিহতদের পরিচয় জানিয়েছে। তারা হলেন, রোমান, তামারা ও স্তানিসলাভ। পোস্টে বলা হয়, ‘তাদের স্মৃতি আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমরা হামলাকারীদের ক্ষমা করবো না।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার নেতৃত্বের ওপর জোরালো চাপ না দিলে এই নৃশংসতা বন্ধ হবে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের নীরবতা পুতিনকে উৎসাহিত করছে। অবশ্যই কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কায়া কালাস বলেন, ‘এই যুদ্ধ থামাতে আন্তর্জাতিক মহল থেকে রাশিয়াকে সর্বোচ্চ কঠোর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, শিশুদের এই ধরনের সহিংসতার শিকার হতে দেখে অনেক কষ্ট হচ্ছে।’
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল বলেন, ‘পুতিন শান্তি চান না, তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। আমাদের তা হতে দেওয়া উচিত নয়। এজন্য আমরা ইউরোপীয় পর্যায়ে আরো নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করব।’
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত রাশিয়া ইউক্রেনে ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ২৫০টি ড্রোন নিক্ষেপ করে, ফলে ১৫ জন আহত হন। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানায়, তারা মোট ৪৫টি রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র ও ২৬৬টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইগনাট বলেন, রাশিয়া মোট ২৯৮টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এই ড্রোন হামলায় খমেলনিতস্কি অঞ্চলে চার জন, কিয়েভ অঞ্চলে চার জন এবং মাইকোলাইভ অঞ্চলে দুইজন নিহত হয়েছেন।
দক্ষিণাঞ্চলের গভর্নর ভিটালি কিম জানান, রোববার সন্ধ্যায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কিয়েভ অঞ্চলে ‘ভয়াবহ রাতের হামলায়’ তিনজন শিশুসহ ১৬ জন আহত হয়েছে ।
কিয়েভের দক্ষিণ-পশ্চিমের মারখালিভকা গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী এক নারী বলেন, ‘পুরো রাস্তায় আগুনে জ্বলছিল।’
যদিও রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের ‘সামরিক-শিল্প অবকাঠামো’ লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে তারা। পাশপাশি ১১০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন গুলি করে ধ্বংস করেছে রাশিয়া।
মস্কো জানিয়েছে, ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কারণে রাজধানীর বিমানবন্দরে সাময়িকভাবে বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে, তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এই ভয়াবহ হামলার মধ্যেই ইউক্রেন ও রাশিয়া দু’দেশের ৩০৩ জন করে বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এটি ছিল গত ১৬ মে ইস্তাম্বুলে হওয়া বৈঠকে সম্মত হওয়া চুক্তির শেষ ধাপ।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন তিন দিনেরও বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষ মোট ১ হাজার জন করে বন্দি মুক্তি দিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বন্দি বিনিময়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম দিনে ৩৯০ জন ও দ্বিতীয় দিনে ৩০৭ জন জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিনিময়ের প্রশংসা করে বলেন, ‘এটা বড় কিছুতে রূপ নিতে পারে।’ যদিও এখনো যুদ্ধ বন্ধে তার মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
এএফপির প্রতিবেদক জানান, ইউক্রেনের চেরনিহিভ অঞ্চলের একটি হাসপাতালে মুক্তিপ্রাপ্তদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। তারা দুর্বল হলেও হাস্যোজ্জ্বল ছিলো এবং জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
মুক্ত হয়ে ৩১ বছর বয়সী কনস্তান্তিন স্তেবলেভ তিন বছর বন্দি থাকার পর দেশের মাটিতে পা রেখে বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য অনুভূতি।’
৫৮ বছর বয়সী ভিক্টর সিভাক বলেন, ‘অনুুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না, এটা খুবই আনন্দের’।
তিনি বলেন, আমি ৩৭ মাস ১২ দিন বন্দি ছিলাম। ‘মুক্তি পেয়ে আমি অভিভূত।’
সূত্র: বাসস