ঢাকা | মে ২৬, ২০২৫ - ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

ইসরাইলি হামলায় গাজায় চিকিৎসক দম্পতির ৯ সন্তান নিহত

  • আপডেট: Sunday, May 25, 2025 - 1:30 pm

অনলাইন ডেস্ক: ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় এক চিকিৎসক দম্পতির ৯ সন্তান নিহত হয়েছে বলে শনিবার জানায় গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা। অন্যদিকে, এ ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ।

গাজা সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

সম্প্রতি গাজায় ইসরাইলি অভিযান জোরদার হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। একই সঙ্গে ২ মার্চ থেকে আরোপ করা সম্পূর্ণ অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করার পর, আরও মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি প্রদানের দাবিও উঠে এসেছে।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, “ডা. হামদি আল-নাজ্জার ও তার স্ত্রী ডা. আলা আল-নাজ্জারের বাড়ি থেকে নয় শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের শরীর পুড়ে গেছে। তারা সবাই ওই দম্পতির সন্তান।”

তিনি আরো জানান, শুক্রবারের হামলায় হামদি আল-নাজ্জার এবং তাদের আরেক সন্তান আদম গুরুতর আহত হয়েছে । তাদের নাসের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের এক সূত্র জানিয়েছে, আদামের বয়স ১০ বছর।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনীর আলবুরশ এক্স-এর পোস্টে লেখেন, চিকিৎসক হামদি আল-নাজ্জার তার শিশু বিশেষজ্ঞ স্ত্রীকে ওই হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে ঘরে ফেরার সময় হামলার ঘটনা ঘটে।

তিনি আক্ষেপ করে আরো জানান, “এটাই গাজার চিকিৎসকদের বাস্তবতা। এ কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করার মত না।”
বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা থেকে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, উদ্ধারকারীরা পুড়ে যাওয়া মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে বের করছেন।

এএফপির ফুটেজে দেখা যায়, শিশুদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় নাসের হাসপাতালে। সেখানে সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়া মরদেহ ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

উইসাম আল-মাধুন নামে এক স্বজন বলেন, “হঠাৎ করে একটি এফ-১৬ মিসাইল এসে পুরো বাড়ি ধ্বংস করে দেয়। আমার বোন, তার স্বামী আর তাদের সন্তানরা  সবাই বেসামরিক নাগরিক। এই শিশুগুলোর কী অপরাধ নেতানিয়াহুর কাছে?”

ঘটনার বিষয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা সেনাদের নিকটস্থ একটি স্থাপনায় সক্রিয় সন্দেহভাজনদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে খান ইউনিস শহরকে বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র বলেও দাবি করেন।

তবে “নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে” বলে জানানো হয় সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে। এতে আরো বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে বিমান বাহিনী ১শ টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।

মাহমুদ বাসাল জানান, শনিবার ভোর থেকে চালানো হামলায় গাজাজুড়ে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যে খান ইউনিসের আমাল এলাকায় ভোররাতে এক বাড়িতে হামলায় দুই শিশুসহ এক দম্পতি নিহত হন।

শহরের পশ্চিমে, ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা মানুষের ভিড়ে চালানো ড্রোন হামলায় আরও পাঁচজন প্রাণ হারান।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার বলেন, “গাজা যুদ্ধের সবচেয়ে নিষ্ঠুর পর্ব পার করছে ফিলিস্তিনিরা।”

তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিনের অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধের ভয়াবহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

২ মার্চের পর প্রথমবার গত সোমবার সীমিত আকারে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ শুরু হয়।

এদিকে গাজা সিটি পৌরসভা শনিবার সতর্ক করে জানায়, ভেঙে যাওয়া অবকাঠামো মেরামতের উপকরণ না থাকায় “পানিসংকট প্রকট” হতে পারে।

এদিকে, শনিবার রাতে তেল আবিবে ফের বিক্ষোভ হয়, অংশগ্রহণকারীদের “জিম্মিদের বাঁচান, যুদ্ধ বন্ধ করুন” লেখা ব্যানার বহন করতে দেখা যায়।

বিক্ষোভরত জোনাথন আদেরেথ বলেন, “আমরা এখনই যুদ্ধের সমাপ্তি চাই। কারণ আমরা বুঝে গেছি, এই যুদ্ধ জিম্মিদের মুক্তি দেবে না, বরং উভয় পক্ষের জন্য আরো মৃত্যু ও দুর্ভোগ বয়ে আনবে।”

শনিবার সকালে ইসরাইলের ন্যাশনাল সাইবার ডিরেক্টরেট জানায়, তারা এমন অনেক ফোনকলের তথ্য পেয়েছে, যেখানে “জিম্মির কণ্ঠস্বর, বিস্ফোরণের শব্দ ও চিৎকারের রেকর্ডিং বাজানো হয়েছে।”

ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম জানায়, এসব ফোনে শোনা যাওয়া অডিও সম্ভবত হামাস কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত জিম্মি ইয়োসেফ হাইম ওহানার ভিডিও থেকে নেওয়া।

তবে ডিরেক্টরেট এটিকে “জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রয়াস” বলে অভিহিত করে বিষয়টি তদন্তাধীন বলে জানান।

দু’মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ থেকে ফের অভিযান শুরু করে গাজায়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানায়, নতুন করে হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ হাজার ৭৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৯০১ জনে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

সূত্র: বাসস

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS