বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশে সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে হবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় পুঁজি নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগের প্রবণতা বেড়েছে। এসব উদ্যোক্তা ভারত, আরব আমিরাত, হংকং, আয়ারল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বিনিয়োগ করছেন।
সেসব দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খনিজ, মেশিনারিজ, টেক্সটাইল, ফার্মা, সেবা, ট্রেডিং খাতে পুঁজি নেয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, আগের বছরের তুলনায় গেল বছরে পুঁজি নেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির হার ১২০ দশমিক ১০ শতাংশ। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এসব অর্থের বড় অংশই বিনিয়োগ করা হয়েছে ভারতে।
অবশ্য বিদেশে কার্যরত কোম্পানিগুলোর অর্জিত মুনাফা দেশে না এনে ফের বিনিয়োগ করার প্রবণতা গত এক বছরের ব্যবধানে সাড়ে ৩৫ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পরিচালিত এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানিতে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করার প্রবণতাও কমেছে।
বরং তারা আগের ঋণ পরিশোধ করছে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বিদেশে বিনিয়োগের এই তথ্য দেশের যেসব উদ্যোক্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, তার হিসাব। এর বাইরেও দেশ থেকে পাচার করে বা বেআইনিভাবে আরও অনেক বেশি পুঁজি বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত কার্যক্রমে এসব তথ্যও বেরিয়ে আসছে। বিনিয়োগের নামে অর্থ পাচারের হীন উদ্দেশ্যে যারা বিদেশে টাকা পাচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই, যা বলাই বাহুল্য। কিন্তু যারা বিদেশে বৈধ উপায়ে অর্থ বিনিয়োগ করছেন, তারা কেন তা করছেন, সে প্রশ্নের উত্তর মেলা দরকার।
দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বিদেশে বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করে তুলছে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যেমন জরুরি, তেমনি অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা ছিল, তা দূর হয়েছে কিনা, তা-ও জানতে হবে।
আমরা জানি, বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, এর কোনোটিই ইতিবাচক নয়। ভুলে গেলে চলবে না, বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে, শুধু দেশের উদ্যোক্তারাই নন, বিদেশি বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য কখনই ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।
এছাড়া, দেশের উদ্যোক্তাদের বিদেশ প্রবণতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ভুল বার্তা দেবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আরেকটি বিষয় স্মরণে রাখা দরকার, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। দেশে বিনিয়োগ কমলে বেকারত্বও আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশে সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।