ঢাকা | মে ২৫, ২০২৫ - ৪:০৬ পূর্বাহ্ন

তিন উপদেষ্টাকে সরাতে চায় বিএনপি,দুই বিষয়ে রোডম্যাপ চেয়েছে জামায়াত, পাঁচ বিষয় তুলে ধরেছে এনসিপি

  • আপডেট: Sunday, May 25, 2025 - 12:03 am

ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক:

সোনালী ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এবং সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরানোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এর পরপরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াত।

বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে মূলত দুটি বিষয়ে স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছেন তারা। অপরদিকে, সবশেষ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঁচটি বিষয় তুলে ধরেছেন।

গতকাল শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী ব্যক্তিগতভাবে এবং পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। তাই আওয়ামী লীগের বিচার সবচেয়ে বেশি দাবি করে বিএনপি।

ফলে এই সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের বিচার অসম্পন্ন থাকলে বিএনপি ক্ষমতা গেলে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে শেষ করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি বিএনপি জানিয়েছে বলেও জানান মোশাররফ।

তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে আলোচনা বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। আমরা যা অনুমান করেছিলাম তার ওপর ভিত্তি করে একটা লিখিত বক্তব্য নিয়ে এসেছিলাম। সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি। সেই ভিত্তিতে আলোচনা করেছি।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা। যেকোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে আমরা মনে করি জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।

এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি প্রথম থেকেই একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, বরং প্রথম থেকেই এ সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

এদিকে বৈঠক শেষ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে জনগণের বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়া একটি স্বস্তিজনক সময়ে নির্বাচন হতে পারে। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন। জামায়াতের আমির মনে করেন, সময়টি কখন, সেটির একটি রোডম্যাপ (পথনকশা) দরকার। পাশাপাশি সংস্কারেরও রোডম্যাপ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। আবার সব সংস্কার এই সরকার করতে পারবে না। মাত্র পাঁচটি সংস্কারে সরকার হাত দিয়েছে। সেগুলো সন্তোষজনকভাবে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। শফিকুর রহমান বলেন, সবাই এগিয়ে এলে অর্থবহ সংস্কারের মধ্য দিয়ে অর্থবহ নির্বাচন হতে পারে। সবাই সেই দিনের অপেক্ষায়।

সমাজে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল, আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা কেটেছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, জামায়াত এর স্থায়ী নিষ্পত্তি চায়। দুটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে—সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ। এ দুটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির জানান, তাঁরা কোনো উপদেষ্টার পদত্যাগ চাননি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের আমিরের সঙ্গে ছিলেন নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

এদিকে সবশেষ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এই আলোচনায় আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে একটা দাবি ছিল আমাদের, যেটা ৩০ দিনের ভেতরে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, জুলাই আন্দোলনে যারা আহত ও শহীদ হয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও ধীর গতির ছিল।

আর এই আর্থিক বিষয়টা যেন সঠিকভাবে হয় সেই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কে আমরা বলেছি। গতকাল শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আরেকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে যে সকল নির্বাচন হয়েছিল সেগুলো বিতর্কিত ছিল।

তাই সেই পূর্বের নির্বাচনগুলোকে আইনগতভাবে অবৈধ ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে বলেছি। নাহিদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে যে সকল ছাত্র প্রতিনিধিরা উপদেষ্টা হয়েছেন তারা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন না। এ বিষয়ে আমরা আজকে স্পষ্ট করেছি। তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে আজকে বলেছি উনি যেন দায়িত্বে থাকেন এবং দায়িত্বে থেকে গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা সেটি বাস্তবায়নের কাজ করেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা নিতে চাইনি উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস হতাশা ব্যক্ত করেছেন। উনি ক্ষমতা নিতে চাননি আমরাই উনাকে ক্ষমতা দিয়েছি।

উনি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু তিনি কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন। তবে আমরা উনাকে বুঝিয়েছি, উনি যেন সকল কিছু বাদ দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা সেটাকে লক্ষ্য রেখে যেন কাজ করে যান।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS