ঢাকা | মে ২৬, ২০২৫ - ৩:৩৮ পূর্বাহ্ন

চাঁপাইয়ে খামারিরা লাভের স্বপ্ন দেখলেও সীমান্তে ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশের আশঙ্কা

  • আপডেট: Sunday, May 25, 2025 - 11:17 pm

চাঁপাই ব্যুরো: আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ পশু। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত প্রায় ১ লাখ পশু যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির মাঝেও এবার খামারে ও হাটে-বাজারে দাম পাওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর আশা খামারিদের।

তবে শঙ্কা আছে- জেলার সীমান্তের হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ নিয়ে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে নিবন্ধিত ১৩ হাজার ৫২২টি বাণিজ্যিক ও প্রান্তিক খামারে মোটাতাজা করা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ পশু। যেখানে নতুন করে ৫২২টি খামারের বেড়েছে গরু লালন-পালনের সংখ্যা।

প্রান্তিক ও বাণিজ্যিক খামারিদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, এবার লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারিরা। খামারে ও হাটে বাজারে বর্তমানে দাম পাওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর আশাও করছেন তারা।

এবার কোরবানিকে ঘিরে জেলার প্রায় বাড়িতে একটি, দুটি করে দেশি গরু, খাসি, মহিষ, গাড়ল ও ভেড়া লালন-পালন করেছেন প্রান্তিক খামারিরা। তবে ছোট ও বড় বাণিজ্যিক খামারগুলোতে শাহীওয়াল, সিন্ধি, দেশি ষাঁড়সহ নানা জাতের গরু কোরবানিতে বিক্রির জন্য হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে।

খামারি হাসানুল বান্না জানান, কোন ধরনের ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ভিটামিন ওষুধ ছাড়াই শুধু ঘাস, ভুট্ট্রা, ফিড এবং দানাদার খাবার খাইয়ে পশুগুলোকে লালন-পালন করা হচ্ছে। কোরবানির জন্য পশুগুলোকে প্রস্তুত করতে যত্নের কোন কমতি রাখা হচ্ছে না।

  চাঁপাই সদর উপজেলার খামারি কামাল উদ্দিন জানান, কোরবানির পশুর হাটে বাইরের ব্যাপারীদের কাছে  চাঁপাইনবাবগঞ্জের গরুর বাড়তি চাহিদা বরাবরই। এবার তার খামারে রয়েছে ২৫টি দেশি জাতের ষাঁড়। তবে লালন-পালনে দিন দিন খরচ বাড়লেও, এবার ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে আশাবাদী এই খামারি।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে হাটবাজারগুলোতে মিলছে কাঙ্খিত দাম। হাটগুলোর পাশাপাশি খামার থেকেও চলছে বেচাকেনা। তবে এবার গরুর চাহিদা থাকায় সামনের দিনগুলোতে স্থানীয় ক্রেতা এবং হাট-বাজারগুলোতে বাইরের ব্যাপারীদের আনাগোনা বাড়লে এবার বেচা-কেনা ভালো হবে বলেই মনে করছেন এই খামারি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুনজের আলম মানিক জানান, প্রতিবছর গো-খাদের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় যখন এই খাতে গত কয়েক বছর ধরে দেখা দিয়েছিল অনিশ্চিয়তা, তখন এবার বেড়েছে খামারি ও গরু লালন-পালনের সংখ্যা।

তাই এই খাতকে ধরে রাখতে খামার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও খাদ্যের দাম কমানোসহ ভুর্তকির দাবি জানান তিনি।  খামারি কামাল হোসন জানান, কোরবানির পশুর হাটে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গরুর বাড়তি চাহিদা বরাবরই। এ বছরও জেলায় প্রায় ৩ লক্ষাধিক গরু, মহিষসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।

যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, ঢাকা, খুলনা, কুমিল্লা, চট্রগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হবে এসব পশু। তিনি আরও জানান, বর্তমানে পশুগুলো মোটাতাজা করতে খামারগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। হাটগুলোর পাশাপাশি বেচা-কেনা শুরু হয়েছে খামার থেকেও।

খামারি ইকবাল হোসেন জানান, পশু লালন-পালনে দিন দিন খরচ বাড়লেও এবার নায্যমুল্য পাওয়া নিয়ে আশাবাদী তারা। বর্তমানে হাটবাজারগুলোতে মিলছে কাঙ্খিত দামও। আশা-  শেষ পর্যন্ত ন্যায্য মূল্য পেলে অনুপ্রেরণা পাবে সামনের দিনগুলোতে গরু-লালন পালনে। তবে, লাভের আশার মাঝেও আশঙ্কা কাটছেনা খামারিদের।

বলছেন, কোরবানির হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর আমদানি হলে, লোকসানে পড়বেন তারা। এদিকে, ৫৩ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মনির-উজ-জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে বিএসএফের পুশইনেরে কারণে গোটা সীমান্তে এমনিতেই একটু বেশি সতর্কতাজারি করা হয়েছে।

তারপর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে যাতে, ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ না করে, সেজন্য প্রতিটি বিওপিকে বিশেষ সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে সব ধরনের প্রস্তুতির কথা বলছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

এজন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন তারা। তিনি এবার ঈদে খামারিরা ভালো দাম পেয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS