বন্যার আশঙ্কা নদী খননে দৃষ্টিপাত জরুরি

বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছরের মতো দেশে এবারও বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এরইমধ্যে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে দেশের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে।
এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক। সম্প্রতি রাতভর বৃষ্টিপাতের ফলে রংপুর মহানগরীসহ এ অঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের অনেক স্থান প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যে দেখা গেছে তিস্তা নদীর ডালিয়া, গংগাচড়া, কাউনিয়াসহ সবক’টি পয়েন্টে পানির স্তর বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
এদিকে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট এলাকার গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের একাধিক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভারী বর্ষণে শেরপুরের সীমান্তবর্তী তিন উপজেলায়ও দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ ঘোষণা করে আগাম সতর্কতা জারি করেছে।
দেশে প্রতিবছরই কম-বেশি বন্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশ ভাটির দেশ। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নদীর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে, মূলত প্রতিবেশী দেশ ভারতে। ফলে অতিবৃষ্টির সময় উজানে থাকা ভারত বাঁধ খুলে দিলে এদেশে বন্যা দেখা দেয়। গত বছরও আমাদের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে।
বন্যা বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে তোলে। উপদ্রুত এলাকার মানুষের প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় খাদ্য ও নিরাপদ পানির সঙ্কট। নিরাপদ পানির অভাব থেকে পানিবাহিত নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া দেখা দেয় যোগাযোগ সঙ্কটও।
কাজেই বন্যা মোকাবিলার পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া জরুরি। যে কোনো দুর্যোগ সামনে রেখে এর মানবিক বিপর্যয়ের দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। এজন্য সম্ভাব্য বন্যাকবলিত এলাকায় অসহায় মানুষ যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় পায়, এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়েও আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।
বন্যা-পরবর্তী সংস্কার ও পুনর্বাসনের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। দেশের নদ-নদীগুলোর নাব্য হ্রাস পেয়েছে এবং এর ফলে প্লাবন ভূমির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এতে কম পানিতেই বেশি বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ অবস্থায় নদী খননের মাধ্যমে উজান থেকে বেয়ে আসা পলি নিয়মিতভাবে ও দ্রুত অপসারণ করা না হলে ভবিষ্যতে দেশে বন্যার প্রকোপ ক্রমেই বাড়তে থাকবে। তাই অবিলম্বে এ দিকটিতে দৃষ্টি দেয়া দরকার বলে মনে করি আমরা।