নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাহারে রাবি ইসলামী ছাত্রী সংস্থার প্রতিবাদ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রতিবেদন প্রত্যাহার করাসহ চার দফা দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রী সংস্থা।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তারা ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’র বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তাদের বাকি তিন দফা দাবি হলো ধর্ম, সংস্কৃতি ও জনমতকে অবজ্ঞা করে গঠিত বর্তমান নারী বিষয়ক কমিশন বাতিল করে ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতায় বিশ্বাসী প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে; পতিতাবৃত্তি নির্মূলের কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট নারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ধর্মীয় বিধানসমূহকে সংবিধানের আলোকে রক্ষা করে নারী উন্নয়নের একটি ভারসাম্য মূলক রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, সম্প্রতি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট যে প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা জমা দেওয়া হয়েছে তা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের উপর সরাসরি আঘাত হানে।
এটি নারী উন্নয়নের নামে একটি মতাদর্শিক ও পশ্চিম অনুকরণভিত্তিক আগ্রাসন ছাড়া কিছুই নয়। এছাড়া নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার পর ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রার’ নামে নতুন নাটক শুরু করে তারা। আমরা এ যাত্রা ঘৃণ্যভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
সংগঠনটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দাবি করে এক শিক্ষার্থী বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আমাদের ধর্ম, ইসলাম, জাতিসত্তা তথা নারীদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে।
যেখানে নারীদের মর্যাদা খর্ব করা হয়েছে। আমাদের মুসলিম পারিবারিক আইন রয়েছে, যেমন উত্তরাধিকারসুত্রে সম্পত্তি, তালাক, বিয়ে—এখানে স্বাধীনতার নামে এমন কিছু প্রস্তাবনা উল্লেখ করেছে, যা আমাদের পারিবারিক কলহ বা দ্বন্দ্বকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
তারা বলছে যে তারা নারী পুরুষের মধ্যে অধিকারের সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা করেই নারী-পুরুষের মধ্যে একটা পার্থক্য রেখেছেন। যা অগ্রাহ্য করেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন একটা যুক্তি পেশ করেছে।
দপ্তর ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক দাবি করে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
কারণ এ কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এখানে বেশকিছু বিতর্কিত প্রস্তাবনা এসেছে যেগুলো পুরোপুরি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এগুলো যদি একজন মুসলিম বিশ্বাস করে তাহলে সে আর মুসলিম থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনে কোনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে রাখা হয়নি। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধানকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও কমিশনে কোনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে রাখার প্রয়োজন বোধ করেননি?
তার জবাবে স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি ধর্মকে রাষ্ট্রের সঙ্গে সসংশ্লিষ্ট করতে চান না। কিন্তু আমাদের অবস্থান হচ্ছে, ইসলাম শুধুমাত্র ঘরে বা ব্যক্তিগয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে রাষ্ট্র পর্যায়ে সবখানে ইসলামের বিধান আছে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমান সেগুলো মানতে চাই। তাই রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবি রাষ্ট্র যেন আমাদের সেসব বিধান, বিশ্বাস অবমাননা না করে। আল্লাহর বিধানের বিপরীত বিধান কখনোই কোনো মুসলিম মেনে নেবে না।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্র সংস্থার বিভিন্ন নেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।