ঢাকা | মে ২২, ২০২৫ - ৫:১৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিয়ে দ্বন্দ্বে অচলাবস্থায় তালন্দ কলেজ

  • আপডেট: Wednesday, May 21, 2025 - 10:15 pm

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত তালন্দ ললিত মোহন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এক সময়ে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকা এই কলেজটিতে এখন কমেছে শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার ফলে দুই একটি ক্লাস হলেও ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। নিয়মিত যেমন ক্লাস হয় না, তেমনি শিক্ষকদের উপস্থিতিও কম। এর মধ্যে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়েছে সভাপতি নিয়োগ নিয়ে জটিলতা।

কে হবেন সভাপতি, এ নিয়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ ললিত মোহন ডিগ্রি কলেজে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হঠকারিতার কারণেই ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই কলেজে এমন সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার মানের কারণেই কলেজটি একসময় জেলাজুড়ে পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃত পেয়েছিল। তবে গত সরকারের সময়ে গভর্নিং বডির সভাপতির পদে থেকে শিক্ষক নিয়োগে বেপরোয়া বাণিজ্য করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

গভর্নিং বডির পর্যবেক্ষণের অভাবে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেয়ার পর কলেজটিতে আবারও গতি ফিরতে শুরু করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি কলেজের সভাপতি নিয়োগ নিয়ে নতুন করে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছর কলেজের এডহক কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা সেলিম উদ্দিন কবিরাজকে। তিনি অধ্যক্ষ থাকাকালীন অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মানও বাড়িয়েছিলেন।

এজন্য তিনি জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে পুরস্কারও পান। তার অতীত অবদান বিবেচনায় স্থানীয়রা তাকেই এডহক কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মনোনয়ন দেন। পরবর্তীতে নিয়মিত গভর্নিং বডি গঠনের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ সভাপতি পদে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো এই তালিকায় ছিলেন সেলিম উদ্দিন কবিরাজ, আইনুল হক ও দেওয়ান মকসেদুর রহমান। কিন্তু এই তিনজনকে উপেক্ষা করে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফনির উদ্দিন নামের একজনকে সভাপতি করে চিঠি পাঠানো হয়। এরপর থেকেই কলেজে সঙ্কট শুরু হয়।

তালিকাভুক্ত নয়- এমন একজনকে সভাপতি করায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. জসিম উদ্দীন মৃধা পরদিনই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন। এই আবেদনপত্রে কলেজের ৬৩ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেন। এরপর গত ১১ মার্চ গভর্নিং বডির সভা ডাকেন সভাপতি ফনির উদ্দিন।

কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের তালিকার বাইরে থাকা সভাপতি হওয়ায় সদস্যরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান এবং কেউ সভায় যোগ দেননি। গত ১৫ মার্চ বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শককে চিঠি দিয়ে অবহিত করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এরপরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. জসিম উদ্দীন মৃধা বলেন, সভাপতির পদ নিয়ে জটিলতার ফলে কলেজে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সভাপতি ফনির উদ্দীনের পরামর্শে পর পর তিনটি সভা ডাকি, কিন্তু কেউ আসেননি। কমিটির সদস্যরা ওনার সঙ্গে কাজ করতে চান না। ফলে কলেজে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্ন হচ্ছে।

এটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়, ওনারা কীভাবে সমাধান করবেন জানি না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ও সচিব আমিনুল আক্তার বলেন, তালন্দ কলেজ নিয়ে আমরাও খুব বেকায়দায় আছি। আমাদের উপাচার্য পুরো হতাশ হয়ে গেছেন।

একবার সভাপতি দেয়া হয়, তার নামে অভিযোগ আসে। পরিবর্তন করলে আরেকজন আবার ওপর থেকে ফোন করান। ফলে একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে দিতে হয়। আমাদের কোনো দোষ নেই। এখন এসব বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে বলছি। নির্বাচন হলে কোনো সমস্যা হবে না।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS