ঢাকা | মে ২২, ২০২৫ - ২:৫৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

জাল এবং ভেজালের বেড়াজাল

  • আপডেট: Wednesday, May 21, 2025 - 7:59 pm

অনলাইন ডেস্ক: ভোজন রসিক জাতি হিসেবে বাঙালির জুড়ি নেই। কিন্তু কী খাবেন? যাতে হাত দেবেন তাতেই সমস্যা। খাদ্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল, ওষুধে ভেজাল, টাকা জাল, চিকিৎসাসেবার মান নিম্নমুখী- এই ত্রিশঙ্কু অবস্থার মধ্যে পড়ে বাঙালির জীবন এখন ওষ্ঠাগত।

নিরাপদ খাবার আদৌ আছে কি? মাছে ও দুধে ফরমালিন, ফলমূলে কার্বাইডসহ নানান বিষাক্ত কেমিক্যাল, সবজিতে রাসায়নিক কীটনাশক, জিলাপি-চানাচুরে মবিল, বিস্কুট, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংস, জুস, সেমাই, আচার নুডলস এবং মিষ্টিতে টেক্সটাইল ও লেদার রং, পানিতে ক্যাডমিয়াম, লেড, ইকোলাই, লবণে সাদা বালু, চায়ে করাতকলের গুঁড়া, গুঁড়া মসলায় ভুসি, কাঠ, বালু, ইটের গুঁড়া ও বিষাক্ত গুঁড়া রং। ফলে কোনো খাবারই নিরাপদ নয়। কিন্তু এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। সবকিছু চলছে লাগামহীন, ফ্রিস্টাইলে। যে যেভাবে পারে করে কেটে খাচ্ছে। এই বিশেষ দিকগুলো চরম উপেক্ষা করায় জনস্বাস্থ্য দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে।

বাজারে যাবেন, ধবধবে সাদা চাল দেখে মুগ্ধ হবেন। উঁচু দামে কিনে আনবেন। কিন্তু জানতেও পারবেন না পয়সা দিয়ে কী কিনে আনলেন। চালের প্রতি ক্রেতা আকৃষ্ট করতে তাতে মেশানো হচ্ছে ইউরিয়া, মুড়িতে ইউরিয়া মেশানো শুরু হয়েছে তো সেই কবে থেকেই।

অথচ এই ইউরিয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইউরিয়া মেশানো খাদ্য খেলে যকৃতের কোষ ধ্বংস এবং কিডনিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ দিনের পর দিন খোদ রাজধানীতে ইউরিয়া মিশ্রিত চাল, মুড়ি বিক্রি হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।

শুধু চাল ধবধবেই নয়, সুগন্ধি চালও তৈরি করা হচ্ছে কৃত্রিমভাবে। অপেক্ষাকৃত মোটা চাল ছেঁটে নানান প্রকার কেমিক্যাল ও কৃত্রিম সুগন্ধি মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সুগন্ধি চাল। তা উচ্চ দামে বিক্রি করা হচ্ছে ক্রেতাসাধারণের কাছে।

রাইস মিলে ধান থেকে চাল তৈরির সময় টুথপেস্ট, হাইড্রোজ ও অ্যারারুট মেশানো হয়। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় কেমিক্যাল ফ্লেভার। এভাবে তৈরি করা হয় সুগন্ধি চাল। এই চাল খেলে মানুষ নানান রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হবে। দেহের পাকস্থলীতে, ক্ষুদ্রান্তে, বৃহদান্তে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা আছে। এছাড়া কিডনি এবং লিভারও বিকল হয়ে যেতে পারে।

বাজারে মিনারেল ওয়াটারের নামে বিক্রি হচ্ছে ওয়াসার পাইপলাইনের পানি দিয়ে ভর্তি বোতলজাত পানি। ওই পানির অধিকাংশই বিশুদ্ধ নয়। ফলে মিনারেল ওয়াটারের নামে মানুষ মূলত বিষপান করছে। পানির অপর নাম জীবন।

কিন্তু বোতলজাত এই দূষিত পানি পান করে মানুষ নানান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিএসটিআইএর আদেশ অনুসারে পানিসহ যে কোনো পণ্য বাজারজাত করার আগে বিএসটিআইর অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কিন্তু অধিকাংশ মিনারেল ওয়াটার কোম্পানি তা মানছে না। এক হিসাবে দেখা যায়, রাজধানীতে মিনারেল ওয়াটারের অনুমোদনহীন সহস্রাধিক কোম্পানি রয়েছে।

অনেক কোম্পানির অনুমোদন থাকলেও সেগুলোর পানিও মানসম্মত নয়। সাম্প্রতিকসময়ে পরিচালিত এক অভিযানে শতাধিক মিনারেল ওয়াটার কোম্পানিকে জরিমানা করা হয় পানিতে বিশুদ্ধতা রক্ষা না করার কারণে।

খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হলেও এ বিষয়ে আইন প্রয়োগে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। মাঝে মধ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। যৎসামান্য জরিমানা করা হয়।

ব্যস ওই পর্যন্তই শেষ। কিছুদিন পরই আবার শুরু হয় ভেজালের সমারোহ। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রয়োগ করার কোনো নজির নেই। অথচ খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট।

খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের মান এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে সাতটি মন্ত্রণালয় কাজ করে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এখানে এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজমান। কার কোন দায়িত্ব, কে কীভাবে পালন করবে সেটা নিরূপণ করতেই বেলা বয়ে যায়।

আমাদের ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর আছে। দেশে ভোক্তা অধিকার আইনও আছে। কিন্তু কোথাও এই আইনের তেমন প্রয়োগ হতে দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে তাদের তৎপরতা চোখে পড়লেও তা পর্যাপ্ত নয়। বর্তমানে আমাদের দেশে দুরারোগ্য রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ভেজালমিশ্রিত খাবার খাওয়া।

এজন্য ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর লোকজনও এই ভেজালযুক্ত খাবারের বাইরে নয়। কাজেই নিজেদের স্বার্থে হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাপেক্ষে ভেজালবিরোধী অভিযান জোরদার করতে হবে।

দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। ভেজালবিরোধী একটি আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমাজের সচেতন এবং বিবেকবান মানুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

দুই.
রোগব্যাধি হলে ওষুধ খেয়ে জীবন রক্ষা করে মানুষ। কিন্তু সেই ওষুধেও ভেজাল। মানহীন ও ভেজাল ওষুধ খেয়ে রোগ সারার বদলে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে দেশে ওষুধের উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত কোনো স্তরেই সরকারি পরীক্ষাগারে মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। বিপণনের পর অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠান। তখন ওষুধের মান জানা যায়। এর আগ পর্যন্ত পরীক্ষাহীন, মান না জানা ওষুধই ব্যবহার করে মানুষ। এভাবেই ওষুধ কোম্পানিগুলো এদেশের মানুষকে রীতিমতো গিনিপিগে পরিণত করেছে।

এক হিসাব দেখা যায়, প্রতি বছর ১২ হাজার আইটেম ওষুধ বাজারে আসছে। কিন্তু ওষুধ প্রশাসনের যে লোকবল ও যন্ত্রপাতি রয়েছে তাতে তারা মাত্র সাড়ে তিন হাজার আইটেম ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করতে পারে। বাকি ৭০ শতাংশ ওষুধের মান যাচাইহীন অবস্থায় থেকে যায়।

বাজারে যে ভিটামিন পাওয়া যায় তাতে ১৮টি খনিজ সম্পদ আছে বলে উল্খলে করা হলেও এর ছিটেফোটাও আছে কি না পরীক্ষার অভাবে তা জানা সম্ভব নয়। এমনকি ২০০৮ সালে রিড ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি যে প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে অনেক শিশু মৃত্যুবরণ করে সেই প্যারাসিটামল পরীক্ষার যন্ত্রপাতিও নেই ওষুধ প্রশাসনের। তখন এ নিয়ে তোলপাড় চললেও এখন পর্যন্ত পরীক্ষাগারের একমাত্র গ্যাসক্রোমোটোগ্রাফি মেশিনটি নষ্ট।

ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরকে ২০১০ এর ১৭ জানুয়ারি অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু এর তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। নেই ওষুধের মান যাচাই ও পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিও। অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে আলসারের ওষুধ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রক ওষুধ ও ভিটামিন পরীক্ষা করা যায়। ক্যানসার, হরমোনজাতীয় ওষুধ এবং স্টেরয়েড পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।

ফলে ওষুধের মান যাচাইও সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ওষুধ প্রশাসন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ১৯৩টি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন। এতে দেখা যায়, ৬০টিরও বেশি কোম্পানি উৎপাদন ও বিপণনের শর্ত মেনে চলছে না।

ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি এবং বাজারজাত দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হু এর মতে, ওষুধ উদ্ভাবনকারী ছাড়া বর্গনামে ওষুধ প্রস্তুত করাই হচ্ছে নকল ওষুধ। তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বর্গনামে ওষুধ প্রস্তুত চলছে।

ফলে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। অনেক কোম্পানি জেনেশুনে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। অথচ বাংলাদেশে ওষুধ একটি বিকাশমান শিল্প। শুধু জনস্বার্থই নয় কোম্পানিগুলোর নিজ স্বার্থেও ওষুধের মান ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি।

তিন.
জাল টাকা দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট হুমকি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এই জালিয়াত চক্র ব্যাপকহারে তাদের জাল বিস্তার করেছে। অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে তারা টাকা জাল করে বাজারে ছাড়ছে। দেখতে হুবহু আসলের মতো।

কিন্তু পুরোটাই নকল। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সারাদেশে অন্তত ২০টি অত্যাধুনিক নকল টাকা তৈরির কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায়ই প্রায় ১৫টি। আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে এই জালিয়াতচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা কোরবানির পশুর হাটকে জাল টাকা বিস্তারের জন্য টার্গেট করে।

জানা যায়, টাকা জাল করার প্রতিটি কারখানায় ঘণ্টায় প্রায় দুই লাখ টাকার জাল নোট তৈরি হয়। ব্যাপক হারে এসব নোট বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব অপরাধীর অনেককে পাকড়াও করা হলেও তারা আবার জামিনে বেরিয়ে এসে একই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।

আইনের ফাঁক থাকায় এই ঘৃণ্য অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। এদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সাক্ষীর অভাবে তা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে।

এভাবেই জালিয়াত চক্র সহজেই বড় ধরনের অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব সুপারিশ আকারে পাঠানো হয়।

তাতে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম বা বড় চালানসহ গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা মামলাকে ‘জামিন অযোগ্য’ হিসেবে বিবেচনা করার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়। এছাড়া দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এসব মামলার বিচার এবং জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ঢাকাসহ সারাদেশে জাল টাকা-সংক্রান্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে আছে। মামলা জটের কারণে অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে গিয়ে আবার পূর্বতন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

জাল নোটের অবারিত বিস্তারে আসল টাকার মূল্য কমে যায়। মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয় এবং মুদ্রার ওপর আস্থা নষ্ট হয়। ফলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে দেশের কাগুজে মুদ্রার নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও ভাবতে হবে। জাল টাকা তৈরি ও বিপণন ফৌজদারি অপরাধ।

এতে জড়িতদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে অপরাধী চক্র ঠিকই অপরাধ করে যাচ্ছে। এসব অপরাধীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগাযোগ থাকার তথ্যও রয়েছে। জানা যায়, কিছু জঙ্গি সংগঠনের ব্যয় নির্বাহ হয় এই জাল টাকা দিয়ে।

আসন্ন কোরবানির ঈদে পশু কেনাবেচায় জাল টাকা ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। পুলিশি তৎপরতায় জালিয়াত চক্র মাঝে মধ্যে ধরা পড়ে। কিন্তু এদের বাইরেও বড় জালিয়াত চক্র সক্রিয় রয়ে যায়।

এ অবস্থায় জাল নোটের প্রবাহ ব্যাপকহারে বাড়লে দেশে প্রচলিত নোট প্রত্যাহার করে নতুন নোট চালু প্রয়োজন হতে পারে। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। এতে বিপর্যস্ত হবে সাধারণ মানুষের জীবন।

এ পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাংকিংয়ের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ডিজিটালাইজড করা প্রয়োজন। ব্যাংক ব্যবস্থায় জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোরবানির পশুর হাটেও জালিয়াত চক্রের অপতৎপরতা বন্ধে জাল টাকা শনাক্তকারী মেশিন বসাতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতাও বাড়ানো জরুরি।

এসব উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে মেশিনে আসল নকল বোঝার সুযোগ নেই। এই মেশিন ছাড়াও কী দেখে নকল টাকা চেনা যাবে সে বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।

নকল টাকা তৈরি ও বিপণন ফৌজদারি অপরাধ। এজন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজার বিধানও রয়েছে। যারা ধরা পড়েছে তাদের অপরাধ অনুযায়ী সাজার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে জাল টাকার বিস্তার রোধ করা সম্ভব।

চার.
তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাসেবার এক করুণ চিত্র। অধিকাংশ হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়ার অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি নেই। সেবাদানকারীরা সময়মতো কর্মক্ষেত্রে হাজির হন না। ডাক্তাররা গ্রামে যেতে চান না। ওষুধপত্রের সংকট। চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাব। দেশের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও আসলে ভালো নয়।

হাজার হাজার মানুষের জন্য ডাক্তার রয়েছেন মাত্র একজন। এটা কোনো অবস্থায়ই মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া চিকিৎসা এখন সেবা নয়, বাণিজ্য। যেখানে সেখানে গজিয়ে উঠছে হাসপাতাল ক্লিনিক।

অভিযোগ রয়েছে- ডাক্তাররা এখন সরকারি হাসপাতালে সময় দেওয়ার চেয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে অধিক মনোযোগী। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।

লেখাটা শুরু করেছিলাম খাদ্যে ভেজাল নিয়ে। এরপরই এলো মানহীন ও ভেজাল ওষুধের প্রসঙ্গ। তারপর টাকা জাল। এখন দেখা যাচ্ছে চিকিৎসাখাতেরও বেহাল দশা। তাহলে মানুষজন যাবে কোথায়? স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও যদি মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা না যায় তাহলে এই স্বাধীনতার মানে কী? দেশের মানুষ এখন অন্তত মোটা-কাপড় মোটা ভাত খেয়ে, রোগে-শোকে চিকিৎসা পেয়ে বেঁচে থাকতে চায়। আর সেই বাঁচাটা যেন আক্ষরিক অর্থেই ভেজালমুক্ত হয় সেই নিশ্চয়তাও চান তারা।

 

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS