বজ্রপাত থেকে জীবন বাঁচাতে দরকার গণসচেতনতা

বাংলাদেশে বজ্রপাতে বছরে গড়ে প্রাণ হারান ৩০০ জন এবং সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতপ্রবণ জেলা সুনামগঞ্জসহ সিলেটের চার জেলা ও নেত্রকোণা। আর বজ্রপাতে প্রাণ হারানোদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো কৃষক, যারা ফসল ফলান, বন্যা ও খরার ভয়কে জয় করেন, আর অপেক্ষা করেন ফসল ঘরে তোলার সময়টার জন্য।
কিন্তু এই বহু কাক্সিক্ষত সময়ে যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাতের শিকার হয়ে কৃষকের প্রাণ যায়, তখন তা শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা দেশের জন্যই অশনি সংকেত হয়ে ওঠে। দেশে বজ্রপাত নির্ণয় ও সতর্কতা ব্যবস্থায় কিছু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে। তবে তা অধিকাংশ কৃষকের নাগালে নেই। হাওরাঞ্চলের মতো দুর্বল নেটওয়ার্কের জায়গায় তা কার্যকরভাবে পৌঁছায় না।
অধিকাংশ কৃষকই স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না, ফলে তারা এসব বার্তা পান না। এছাড়া, বজ্রপাত প্রতিরোধক ব্যবস্থাÑ যেমন লাইটনিং অ্যারেস্টরÑগ্রামীণ স্কুল, মসজিদ, খোলা মাঠে নির্মিত নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র বা কৃষক সমবায় অফিসে স্থাপন করা হয়নি। আবার বজ্রপাতের সময় কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়, তা নিয়েও নেই কোনো ব্যাপক প্রচার বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। বজ্রপাত থেকে জীবন বাঁচাতে চাইলে প্রথমেই দরকার গণসচেতনতা।
বজ্রপাত শুরু হলে খোলা মাঠ, বিল, নদী বা উঁচু গাছপালা থেকে দূরে থাকা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করা, গাছের নিচে না দাঁড়ানো এবং নিরাপদ কংক্রিট ভবনে আশ্রয় নেয়া উচিত। কিন্তু এসব নিয়ম কতজন জানেন? আর যারা জানেন, তারাও অনেক সময় অবহেলা করেন জীবিকার তাগিদে।
এই প্রেক্ষাপটে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত ভূমিকা অপরিহার্য। প্রতি উপজেলায় বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেখানে নির্দিষ্ট স্থানে লাইটনিং অ্যারেস্টর বসানো, জনগণকে এসএমএস ও লাউডস্পিকারে সতর্কতা জানানো, কৃষকদের হাতে বজ্রপাতে নিরাপত্তাবিষয়ক নির্দেশিকা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।