ঢাকা | মে ২০, ২০২৫ - ৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

পুলিশের মারণাস্ত্র প্রত্যাহার: জবাবদিহিমূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পথে এক ধাপ

  • আপডেট: Tuesday, May 20, 2025 - 12:23 am

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে গত বছর জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ‘নির্বিচার’ মারণাস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠে আসে, যা তাদের ভাবমূর্তিতে মারাত্মক ধাক্কা দেয়।

এমন প্রেক্ষাপটে সরকার পুলিশের হাতে আর কোনো মারণাস্ত্র না রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে-এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও সাহসী পদক্ষেপ। আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের নবম সভায় গৃহীত এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাধারণ পুলিশের হাতে থাকা সব মারণাস্ত্র (যেমন আগ্নেয়াস্ত্র) ফিরিয়ে নেয়া হবে এবং শুধু আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীর সদস্যদের কাছেই এসব অস্ত্র রাখা হবে। এটি একটি যুগান্তকারী নীতি পরিবর্তন, যা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে শক্তির সীমিত ব্যবহার এবং নাগরিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। এই সিদ্ধান্ত শুধু প্রতীকী নয়, বরং এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামোয় দীর্ঘদিনের এক চর্চার পুনর্মূল্যায়ন।

পুলিশ বাহিনী যেহেতু মূলত জনসাধারণের সেবা ও নাগরিক সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত, তাই তাদের হাতে অতিমাত্রায় প্রাণঘাতী অস্ত্র থাকা গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। বরং নিয়ন্ত্রিত ও পরিস্থিতিনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অধিকতর কার্যকর ও ন্যায়সংগত। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যত্নবান হতে হবে। জননিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো শূন্যতা তৈরি না হয়, সে নিশ্চয়তা রক্ষা করতে হবে। সেই সঙ্গে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণ, মানবিক আচরণ ও মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতির ওপর জোর দিতে হবে, যাতে অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ ছাড়াই তারা সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে।

এছাড়াও, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। র‌্যাবের কার্যক্রম, নাম ও পোশাকসহ সব কিছু পুনর্বিবেচনার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা বাহিনীটির বর্তমান কাঠামো ও দায়িত্ব পালনে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে।

এই সভায় সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়েও যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, বিশেষ করে ভারত থেকে অনুপ্রবেশের পেছনে সুপরিকল্পিত ‘পুশইন’-এর অভিযোগ, সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরা এবং কূটনৈতিকভাবে সমাধান খোঁজা জরুরি।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এসব সিদ্ধান্ত যেন কেবল সভাকক্ষেই সীমাবদ্ধ না থাকে, তার জন্য প্রয়োজন আইনি ভিত্তি, স্বচ্ছ বাস্তবায়ন কৌশল ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় নজরদারি।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS